পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রাবতী
১১৫

এই পত্রে লিখিয়াছে দুঃখের ভারতী।
জয়ানন্দ দিছে পত্র শুন চন্দ্রাবতী॥
পত্রে পড়িল কন্যা সকল বারতা।
পত্রেতে লেখ্যাছে নাগর মনের দুঃখকথা॥

“শুনরে প্রাণের চন্দ্রা তোমারে জানাই।
মনের আগুনে দেহ পুড়্যা হইছে ছাই॥
অমৃত ভাবিয়া আমি খাইয়াছি গরল।
কণ্ঠেতে লাগিয়া রইছে কাল-হলাহল॥
জানিয়া ফুলের মালা কালসাপ গলে।
মরণে ডাকিয়া আমি আন্যাছি অকালে॥
তুলসী ছাড়িয়া আমি পূজিলাম সেওরা।
আপনি মাথায় লইলাম দুঃখের পসরা॥
জলে বিষ বাতাসে বিষ না দেখি উপায়।
ক্ষমা কর চন্দ্রাবতী ধরি তোমায় পায়॥
একবার দেখিব তোমায় জন্ম শেষ দেখা।
একবার দেখিব তোমার নয়নভঙ্গি বাঁকা॥
একবার শুনিব তোমার মধুরসবাণী।
নয়নজলে ভিজাইব রাঙ্গা পা দুইখানি॥
না ছুঁইব না ধরিব দূরে থাক্যা খাড়া।
পুণ্যমুখ দেখ্যা আমি জুড়াইব অন্তরা[১]
শিশুকালের সঙ্গী তুমি যৈবনকালের মালা।
তোমারে দেখিতে কন্যা মন হইল উতালা॥
জলে ডুবি বিষ খাই গলাই দেই দড়ি।
তিলেক দাড়াইয়া তোমার চান্দমুখ হেরি॥
ভাল নাহি বাস কন্যা এই পাপিষ্ট জনে।
জন্মের মতন হইলাম বিদায় ধরিয়া চরণে॥
এই দেখা চক্ষের দেখা এই দেখা শেষ।
সংসারে নাহিক আমার সুখশান্তির লেশ॥

  1. অন্তরা=অন্তর, হৃদয়।