বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রাবতী
১১৭

কিসের সংসার কিসের বাস কেবা পিতামাতা।
পুজিতে ভুলিল কন্যা শৈশবের কথা॥
জয়ানন্দে ভুলি কন্যা পূজয়ে শঙ্করে।
একমনে ভাবে কন্যা হর বিশ্বেশ্বরে॥
শান্তিতে আছয়ে কন্যা একনিষ্ঠ হইয়া।
আসিল পাগল জয়া শিকল ছিড়িয়া॥

“দ্বার খোল চন্দ্রাবতী তোমারে শুধাই।
জীবনের শেষ তোমায় একবার দেখ্যা যাই॥
আর না দেখিব তোমায় নয়ন চাহিয়া।
দোষ ক্ষমা কর কন্যা শেষ বিদায় দিয়া॥”

কপাটে আঘাত করে শিরে দিয়া হাত।
বজ্রের সমান করে বুকেতে নির্ঘাত॥
যোগাসনে আছে কন্যা সমাধিশয়নে।
বাহিরের কথা কিছু নাহি পশে কানে॥
পাগল হইয়া নাগর কোন কাম করে।
চারি দিকে চাইয়া দেখে নাহি দেখে কারে॥
না খোলে মন্দিরের কপাট নাহি কয় কথা।
মনেতে লাগিল যেমন শক্তিশেলের ব্যথা॥

পাগল হইল জয়ানন্দ ডাকে উচ্চৈস্বরে।
“দ্বার খোল চন্দ্রাবতী দেখা দেও আমারে॥
না ছুইব না ধরিব দূরে থাক্যা খাড়া।
ইহজন্মের মতন কন্যা দেও মোরে সাড়া॥
দেবপূজার ফুল তুমি তুমি গঙ্গার পানি।
আমি যদি ছুই কন্যা হইবা পাতকিনী॥
নয়ন ভরে দেখ্যা যাই জন্মশোধ দেখা।
শৈশবের নয়ান দেখি নয়ানভঙ্গি বাকা॥”

না খোলে মন্দিরের দ্বার মুখে নাহি বাণী।
ভিতরে আছয়ে কন্যা যৈবনে যোগিনী॥