দেখিতে সোনার নাগর গো চান্দের সমান।
সুবর্ণ কার্ত্তিক যেমন গো হাতে ধনুরবান॥
ওইনা পন্থ দিয়া নাগর গো আনাগোনা করে।
সোনাইরে দেখিল নাগর আইনা গাঙ্গের ধারে॥
গাঙ্গের পারে কেওয়া পুষ্প গন্ধেতে হাইল[১]।
মাধবের সঙ্গে সোনাইর গো পরথম দেখা হইল॥
“কোথায় থাকে সুন্দর নাগররে কোথায় বাড়ীঘর।
মনের কথা কই বা কারে কে দেয় উত্তর॥
চারি চক্ষু এক অইলরে পরাণ কাইড়া[২] লইল।
কোন্ দৈবে মনের মানুষরে[৩] আন্যা দেখাইল।
কোন্ বা দেশে থাকে ভমরারে কোন্ বাগানে বৈসে।
কোন্ বা ফুলের মধু খাইতেরে ভমরা উইড়া আইসে॥
উইড়া উইড়া আইসে ভমররে ফির্যা ফির্যা যায়।
কোন্ বা ফুলের মধুর আশায়রে ঘুরিয়া বেড়ায়॥
ধরতাম যদি পারতাম[৪] ভমরারে রাইতের নিশাকালে[৫]।
কেশেতে বান্ধিয়া তোমায় রাখতাম খোপার ফুলে॥
খাইতে দিতাম ফুলের মধু বইতে[৬] দিতাম পিড়ি।
শুইতে দিতাম শীতল পাটী সঙ্গে যাইতাম উড়ি॥
পক্ষী হইলে সোনার বন্ধুরে রাখিতাম পিঞ্জরে।
পুষ্প হইলে প্রাণের বন্ধুরে খোঁপায় রাখতাম তোরে॥
কাজল হইলে রাখতাম বন্ধুরে নয়ান[৭] ভরিয়া।
তোমার সঙ্গে যাইতাম বন্ধুরে দেশান্তরী[৮] হইয়া॥”
- ↑ হাইল=ভরপুর।
- ↑ কাইড়া=কাড়িয়া।
- ↑ মানুষরে=মানুষকে।
- ↑ ধরতাম যদি পারতাম=আমি যদি ধরিতে পারিতাম।
- ↑ রাইতের নিশাকালে=গভীর রাত্রে!
- ↑ বইতে=বসিতে।
- ↑ নয়ান=নয়নের অপভ্রংশ। বৈষ্ণব কবিতায় ‘নয়ন’ নয়ান উভয়েরই ব্যবহার আছে। ‘নয়ন না তিরপিত ভেল’; পক্ষান্তরে ‘হেরিব যেদিন আপন নয়ানে, তার সনে মোর কথা’।
- ↑ দেশান্তরী-খলে দেখার প্রয়োগ।