বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৷৷৹
মৈমনসিংহ-গীতিকা

আমাদের দেশে এখন কোন কীর্ত্তিপ্রতিষ্ঠা দূরপরাহত স্বপ্ন। বিলাতে এইরূপ উপলক্ষে প্রাচীন স্মৃতিরক্ষার জন্য শত জনশূন্য স্থান বিশাল নগরীতে পরিণত হইয়া তীর্ণ যাত্রীদের আশ্রমে পরিণত হইতেছে। স্কটের কবিতায় লক্‌লেমন, লক্‌কেট্রিন এবং পার্থ সায়ার প্রভৃতি স্থান শত কীর্ত্তিতে সমৃদ্ধ হইয়া তীর্থ যাত্রীর কেন্দ্রভূমি হইয়া পড়িয়াছে। আমরা তো সকল বিষয়েই তাঁহাদের সঙ্গে সমকক্ষতা করিতে চাই, তাঁহাদের স্বদেশপ্রেমের কণিকা যদি আমরা লাভ করিতাম, তবে এই বিরাট কর্মশালায় কর্মী হইয়া জগতের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতাম, কেবল বক্তৃতা ও অসার বিষয় লইয়া কথা কাটাকাটি করিতে থাকিতাম না। আর এই সকল গীতিকার কথা কি বলিব? এ যে অপ্রত্যাশিত আনন্দ। বঙ্গভারতী বৈষ্ণব গীতিকার রক্ত শতদলে বসিয়াছিলেন,—এবার তাঁহাকে পূর্ববঙ্গের শুভ্র কুমুদদলাসীনা দেখিলাম।

৮। পালাগুলির বিবরণ

 শ্রীযুক্ত চন্দ্র কুমার দে গত তিন-চার বৎসর যাবৎ অক্লান্ত উদ্যমে নানা স্থান পর্য্যটন করিয়া এই পালাগুলির উদ্ধার করিয়াছেন; তিনি নানা স্থানে ঘুবিয়াচেন, আমার চক্ষু দুইটি তাঁহারই সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিয়াছে, আমি প্রতিপদে তাঁহাকে দীর্ঘ উপদেশ-সম্বলিত পত্র লিখিয়া সহায়তা করিয়াছি,—কি ভাবে কোন্ পালা সংগ্রহ কবিতে হইবে, কোন্ কোন্ গাথার ঐতিহাসিক মূল্য কি...কোন্ গুলিব উদ্ধার আপাততঃ ক্ষান্ত রাখিয়া কোন্ দিকে বেশী চেষ্টা কবিতে হইবে, কোথায় কোন্ পালার সন্ধান হইতে পারে ইত্যাদি নানা বিষয়ে আমার মন্তব্য লিখিয়া সুদীর্ঘ পত্রে তাঁহাকে জানাইয়াছি, এই সকল বিষয়ে তাঁহাকে সম্যক্‌ রূপে উপদেশ দেওয়ার জন্য গত বৎ তাঁহাকে কলিকাতায় আনাইছিলাম। তিনি কয়েক দিন, আমাদের এখানে থাকিয়া এই সংগ্রহকার্য সম্বন্ধে অনেক আলোচনা করিয়া অবহিত হইয়া গিয়াছেন।

 তাঁহাকে ক্রমাগত লিখিয়া লিখিয়া আমি গীতোক্ত গ্রামগুলির স্থান নির্দ্দেশ করিয়া লইয়াছি। সার্‌ভে জেনারেলের আফিসের ম্যাপে ‘হাওর’ ও নদীগুলির অনেকেরই নাম নাই; যে সকল গ্রাম বিলুপ্ত হইয়াছে, অথচ জনশূন্য ভিটাগুলির নামে মাত্র স্থানীয় পরিচয় আছে, তাহা উক্ত আফিসের মানচিত্রে নাই। আমি পূর্ব্ব-মৈমনসিংহের সমস্ত গ্রামের নাম-সম্বলিত মানচিত্রগুলি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া চন্দ্রকুমারের সাহায্য গ্রহণপূর্ব্বক যে মানচিত্র-খানি অঙ্কিত করিয়াছি তাহা প্রথম খণ্ডে দিয়াছি। এই মানচিত্র দ্বারা গীতোক্ত স্থানগুলি নখদর্পণের ন্যায় পরিষ্কাররূপে বোঝা যাইবে। চন্দ্রকুমার দে-প্রেরিত মহুয়ার পালায় কতকগুলি গোড়ার পদ ও শেষের পদ বিশৃঙ্খলভাবে দেওয়া ছিল। তিনি যেমন শুনিয়াছিলেন