পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রূপবতী
২৪৯

বাড়ীর নফর ছিল মদন তার নাম।
দেখিতে সুন্দর বড় রূপের কাঠাম[১]
পূজার ফুল তুল্যা আনে ডাকের আগে খাড়া।
দেখিতে সুন্দর রূপ আসমানের তারা॥
জাতি না ভাবিল রাণী কুলমানের কথা।
এই মতে ছাড়ে রাণী কন্যার মমতা॥

ঘরে থাক্যা রূপবতী এতেক না জানে।
নিশিকালে গেল রাণী তার বিদ্যমানে॥
পালঙ্কে ঘুমায় কন্যা চান্দের সমান।
দেখিয়া সুন্দর কন্যা মায়ের কান্দিল পরাণ॥
সুবর্ণ কপোতী মায়ের হৃদয়ের নলী[২]
কেমনে উড়াইয়া দিব খোপ কইরা খালি॥

“উঠ উঠ রূপবতী আঁখি মেল্যা চাও।
শিয়রে দাঁড়াইয়া কান্দে অভাগিনী মাও॥
উঠ উঠ কন্যা আরে দেখ চক্ষু চাহিয়া।
নগরে আগুন লাগল তোমার লাগিয়া॥
তোমার লাগিয়া রাজা জলে ডুইব্যা মরে।
তোমার লাগিয়া আমরা যাই বনান্তরে॥”

স্বপ্ন দেখে রূপবতী মায় কাইন্দা জার[৩]
নগর জুড়িয়া উঠে ক্রন্দন হাহাকার॥
স্বপন দেখিয়া কন্যা উঠিয়া বসিল।
শিয়রে দাঁড়াইয়া মায় কান্দিতে লাগিল॥

“কি কারণে কান্দ মাগো কও কও শুনি।
পরাণে না সয় দেখ্যা তোমার চক্ষের পাণি॥
কিবা অপরাধ আমি করিয়াছি পায়।”
শিয়রে দাঁড়াইয়া কান্দে অভাগিনী মায়॥

32—1918 B.T.
  1. কাঠাম=প্রতিমা।
  2. নলী=বক্ষের হাড়।
  3. জার=জর্জরিত, অবসন্ন। রূপবর্তী স্বপ্নে দেখিল যে তাহার মা কাঁদিতে কাঁদিতে অবসন্না হইয়া গিয়াছেন।