পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কঙ্ক ও লীলা
৩১১

বহু কষ্টে চিতা জ্বালি প্রদক্ষিণ করে।
কন্যার লাগিয়া গর্গ কান্দে হাহাকারে॥
গর্গের কান্দনে দেখ ঝরে বৃক্ষের পাতা।
উপরে আকাশ কান্দে নীচে বসুমাতা॥
দামোদর দাস কহে সব অন্ধকার।
যে নিধি হারাইলা ফিরি না পাইবা আর॥

দৈবের নির্ব্বন্ধ কথা কপাল-লিখন।
সেই দিন শ্মশানে কঙ্ক-গর্গের মিলন॥
বজ্রাঘাতে বৃক্ষ যেমন জ্বলিয়া উঠিল।
হাহাকার করি গর্গ কঙ্কেরে ধরিল॥
“হায় কঙ্ক এতকাল কোথা তুমি ছিলে।
তোমায় ডাকিয়াছে লীলা মরণের কালে॥
কিসের সংসার-ঘর কি হবে আমার।
মায়ের বিহনে আমার সকল অন্ধকার॥
পঞ্চ বছরের শিশু মাও গেল ছাড়ি।
এতকাল পালিয়াছিলাম কোলে কাঁকে করি॥
এহিত কন্যার লাগি সংসার-বন্ধন।
সেই কন্যায় হারাইলাম জন্মের মতন॥
বোধনে[১] প্রতিমা আমার ডুবাইলাম জলে।
কি কব এ কর্ম্মফল আছিল কপালে॥
আর না ফিরিব ঘরে তোমরা সবে যাও।
শালগ্রাম শিলা যত সায়রে[২] ভাসাও॥
আগুন জালিয়া মোর পুড় গৃহ-বাসা।
আজি হতে সাঙ্গ মোর সংসারের আশা॥
আজি হইতে সাঙ্গ মোর সংসারের খেলা।
আর না নিবিবে মোর সংসারের জ্বালা॥”

  1. বোধনে=বোধনের সময়, আবাহন করিয়াই।
  2. সায়রে=সাগরে।