তোমার পুরীর মধ্যে রাখ্যো না[১] বনের মধ্যে নিবাস[২] দিয়া আইস।” তখন সদাগর কান্তে[৩] আরম্ভ কর্ল—“হায়! আমার অত আদরের কন্যা, আর তার কপালে এই দুঃখু। মরা সোয়ামীর কাছে বিয়া”—সদাগর হায় হায় করিয়া বিলাপ করিতে লাগিল।
(৭)
দিশা—গুণের[৪] ঝি গো, কেমন কইরা দিবাম তোমায় বনে।
বাপে মায়ে পালে কন্যা বিয়া দিবার আশে।
আমি কেমন কইরা এমন কন্যা পাঠাই বনবাসে॥
শিশুকালে মাও মইল কত দুঃখু করি।
এমন করিয়া কন্যা পালন যে করি॥
দুষ্কের[৫] কপাল মোর দুঃখু নাইসে যায়।
শুক পংখী কহে কথা না দেখি উপায়॥
আধ পিষ্ট[৬] গেল আমার গুয়ে আর মুতে।
আধ পিষ্ট গেল আমার মাঘ মাস্যা শীতে॥
কত কষ্টে পাল্যা[৭] তুলে এরুর[৮] লাগিয়া।
বনবাসে দিবাম কন্যা নাহি দিবাম বিয়া॥
আমার দুঃখের দিন না হইব দূর।
(৮)
তখন সদাগর কর্ল কি—বাণিজ্যে যাইবার ছল করিয়া ডিঙ্গা সাজাইয়া কন্যারে লইয়া রওনা কর্ল। উজান বাইয়া বাইয়া সদাগর যাইতে যাইতে সামনে এক অরণ্য জঙ্গলা[৯] পড়ল। সাধু এই খানে ডিঙ্গা রাখ্যা কন্যারে লইয়া বনের মধ্যে গেল। যাইতে যাইতে অনেক দূর গেলে কাজলরেখা কন্যা মনে মনে ভাব্তে লাগল। মনের মধ্যে একটা দুঃখু হইল।