কিনা তাকে জিজ্ঞাসা করিল। তখন কাজলরেখা জিজ্ঞাসা করিল—এই মেয়েটা তোমার কে হয়? সে বলিল—এই মেয়েটা আমার কন্যা; পেটের দায়ে কন্যা বিক্রয় করিতে বাহির হইয়াছি। গাওয়ালে[১] যাচাই করিয়া দেখিলাম—কেউ দাসী রাখে না। একজন সন্ন্যাসী আমাকে এই বনের পথ দেখাইয়া কইল যে এই বনে এক রাজকন্যা বাস করে, তার দাসীর প্রয়োজন আছে। সে দাসী রাখিবে। আমার বোধ হয় তুমি সেই রাজকন্যা।
কাজলরেখা মনে মনে ভাবিতে লাগিল—সংসারে এক নিষ্ঠুর বাপ তার কন্যাকে বনে নির্ব্বাসন দিয়া গিয়াছে; তাহ’তে আর-এক নিষ্ঠুর বাপ কিনা পেটের দায়ে কন্যা বিক্রয় কর্তে আইছে[২]। কাজলরেখা ভাব্ল—এই কন্যা আমারই মত জনমদুঃখিনী। সে কন্যার দুঃখে দুঃখিত হইয়া তার দুঃখের দোসর মিলাইবার জন্য হাতের কঙ্কণ দিয়া ঐ কন্যাটিকে কিনিয়া রাখিল।
গান—
কর্ম্মদোষে কাজলরেখা হইছিল[৩] বনবাসী।
কঙ্কণ দিয়া কিন্ল বাই নাম কাঙ্কণ দাসী॥
তখন কাজলরেখা কন্যাকে ভাঙ্গা মন্দির দেখাইয়া কইল——“তুমি মন্দিরের মধ্যে যাও। এই মন্দিরের মধ্যে একজন মরা কুমার আছে, তারে দেইখ্যা ভয় পাইয়ো না। তার শিয়রের মধ্যে যে গাছের পাতা আছে তার রস লইয়া রাইখ্য। আমি ছান কইরা আইয়া[৪] তার চক্ষের দুটী সূচ খুইল্যা এই রস তার চক্ষে দিলেই সে বাঁইচ্যা[৫] উঠ্বে। এই কথা দাসীর কাছে কইয়া[৬] কাজলরেখা ভাল করে নাই। এই কথা কইবা মাত্রই তার বাম চক্ষের পাতা খুব কাঁইপ্যা উঠ্ল।
গান—
কাঙ্কণ দাসীরে যখন কইল এই কথা।
তরাসে কাঁপিল কন্যার বাম চক্ষের পাতা॥
আগে চলে কাঙ্কণ দাসী পাছে পাছে চায়।
মনেতে অসুর বুদ্ধি ভাবিয়া জোয়ায়[৭]॥