বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাজলরেখা
৩৩৫

“কাইন্দ না, কাইন্দ না কন্যা, না কান্দিয়ো তুমি।
বাপের বাড়ীর কুশল তোমায় কইবাম আমি॥
তোমারে যে বনে দিয়া বাপ সদাগরে।
দশ বচ্ছর ধইরা বাণিজ্য না করে॥
তোমার কারণে বাপ-মাও হইল পুত্রীশোকী[১]
দশ বচ্ছর কাইন্দা কাইন্দা অন্ধ করছে আঁখি॥
নাগরিয়া লোকে কান্দে তোমারে হারাইয়া।
দাসদাসী জনে কান্দে তোমারে বিচরাইয়া[২]
হাতী ঘোড়ায় কাইন্দা মরে নাহি খায় ঘাস।
যে দিন হইতে বাপে তোমায় দিছে বনবাস॥
চন্দ্রসূর্য্য মইলান[৩] কন্যা রাত্রদিবা কালে।
তোমার লাইগ্যা বনের পক্ষী কান্দে বইয়া ডালে॥
জ্বালিলে না জ্বলে বাতি পুরী অন্ধকার।
এইখানে কহিলাম কথা দেশের সমাচার॥
দশ বচ্ছর গেছে কন্যা দুই বচ্ছর আছে।
দুই বচ্ছর গেলে কন্যা সুখ পাইবা পাছে॥”


(১৮)

 এই রকমে প্রায় পর্তেক[৪] নিশি রাইতে কন্যা সুখ-দুঃখের কথা পক্ষীর কাছে কয়; কবে তার মুক্তি হইব—এই সব জিজ্ঞাসা করে। পক্ষীও তারে সান্ত্বনা দিয়া ভাড়াইয়া রাখে—এই রকমে আরও কএক দিন যায়। এর মধ্যে আর এক ঘটনা কি ঘট্‌ল, শুন। রাজার বন্ধু যে আছিল, সে ভাবল, এ নিশ্চয়ই রাজকন্যা—কাজলরেখার রূপ দেইখ্যা সে এতই মোহিত হইয়া গেছিল যে, তার আর ধর্ম্মাধর্ম্ম জ্ঞান আছিল না। সে কেমন কইরা যে কাজলরেখারে এইখান থাক্যা সরাইয়া নিয়া বিয়া কর্‌ব, সেই চিন্তা কর্ত্তে লাগল। তখন কর্‌ল কি নকলরাণী যে কাঙ্কণদাসী, তার লগে[৫] গিয়া যোগ দিল। রাজা কাজলরেখার

  1. পুত্রীশোকী=কন্যার বিচ্ছেদ-জনিত দুঃখ অনুভবকারী।
  2. বিচরাইয়া=অন্বেষণ করিয়া।
  3. মইলান=ম্লান।
  4. পর্তেক=প্রত্যেক।
  5. লগে=সঙ্গে।