বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাজলরেখা
৩৪৩

 তখন ধর্ম্মমতি শুক পিঞ্জরের উপরে বসিয়া কাজলরেখার পিতৃকুলের পরিচয় দিতে আরম্ভ কর্‌ল।

গান— 
“ধর্ম্মমতি শুক আমি করি নিবেদন।
মন দিয়া পূর্ব্বকথা শুন সভাজন॥
ভাটিয়াল মুল্লুকে আছিল এক সদাগর।
কুঠীয়াল আছিল সাধু নাম ধনেশ্বর॥
এক কন্যা এক পুত্র ছিল সাধুর ঘরে।
ধনীয়াদ হইল সাধু মা লক্ষ্মীর বরে॥
দশ না বছরের কন্যা কাজলরেখা নাম।
দেখিতে সুন্দর কন্যা অতি অনুপাম॥
হীরা-মতি জ্বলে কন্যা যখন নাকি হাসে।
সুজাতি বর্ষার জলেরে যেমন পদ্মফুল ভাসে॥
চাইর না বছরের পুত্র নাম রত্নেশ্বর।
রত্ন না জিনিয়া তার চিক্কণ কলেবর॥
কন্যার অদৃষ্টে ছিল দুরক্ষর বাণী[১]
কপালের ফেরে কন্যা হইল অভাগিনী॥
আমারে জিজ্ঞাসা করে সাধু সদাগর।
কোন্ দেশে পাইবাম কন্যার যোগ্য বর॥
ধর্ম্মমতি শুক আমি ধর্ম্মে মোর মন।
গণিয়া দেখিলাম তার ভাগ্য-বিড়ম্বন॥

“মরা পতির সনে তার বিবাহ হইবে।
দুঃখে দুঃখে এই কন্যার বার বছর যাইবে॥
এই কন্যা যদি সাধুর সংসারেতে থাকে।
কন্যা লইয়া সাধু পুন পড়িবে বিপাকে॥
এই কন্যা লইয়া তুমি রাখ বনান্তরে।
দুঃখ যে খণ্ডিবে কন্যার বার বছর পরে॥

  1. দুরক্ষর বাণী=মন্দ লিখন; দুর্ভাগ্য। খারাপ কথা।