পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩e যশোহর-খুলনার ইতিহাস পার্শ্ববর্তী দক্ষিণবঙ্গে আসিত ; বাণিজ্য, দস্থ্যত ধৰ্ম্মপ্রচার বা চাকরী প্রভৃতি নান উদ্দেশ্যে উহার দেশের মধ্যে প্রবেশ করিত। কেহ বা যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দী হইয় যশোরে আসিত, কেহ বা আত্ম-কলহ জঙ্গ প্রতাপাদিত্যের আশ্রয় ভিক্ষা করিত। প্রতাপ তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়া তাহাদিগের দ্বার কোন কাৰ্য্য করাইয়৷ লইবার চেষ্টা করিতেন। কেহ তাহার সৈন্তদলভুক্ত হইত, কেহ তাহার শরীররক্ষী সাজিত, কেহ জাহাজ নিৰ্ম্মাণে, গুলিগোলা প্রস্তুত করিবার কৌশলে বা গোলন্দাজের কার্য্যে নিজের ক্ষমতা দেখাইয়া চাকরী পাইত। প্রধানতঃ তাহদের দ্বারা দুইটি কায ইইত ; কেহ জাহাজ নিৰ্ম্মাণ ও সংস্কার করিয়া নাব-বিভাগে নায়ক হষ্টত ; আর কেহ গুলিগোলা প্রস্তুত করিয়া কামান লইয়া যুদ্ধ করিত। উভয়ই গুরুতর কার্য। প্রতাপ যে তাহাদিগকে বিশ্বাস কবিতেন, তাহাতে মুফল ফলিয়াছিল। দেশের লোক বিশ্বাসঘাতকতা করিতে পারে, কিন্তু রুড, পেড্রো বা ভুডলী বিশ্বাসঘাতকতা করেন নাই। পটুগীজ জাতির মধ্য হইতে এই গোলন্দাজ ও নৌ-সৈনিক সংগ্ৰহ করা প্রতাপাদিত্যের সৈন্ত-নিৰ্ব্বাচন প্রণালীর দ্বিতীয় বিশেষত্ব। পূৰ্ব্বাঞ্চলের সহিত প্রতাপাদিত্যের বিশেষ সংক্সৰ ঘটয়াছিল। তাহার সেনাপতিগণের মধ্যে রঘু, মুখ এবং পূর্তবিভাগীয় কৰ্ম্মচারীর মধ্যে জগৎ সহায় দত্ত প্রভৃতি অনেকে শ্ৰীহট্ট ও ত্রিপুরা হইতে আসেন। শুনা যায়, রঘুর অধীন প্রতাপের এক দল পাৰ্ব্বত্য কুকী সৈন্ত ছিল। ইহারা মুখে চিত্র বিচিত্র করিত, হাতে পায়ে গায়ে নানা অদ্ভূত অসভ্য অলঙ্কার পরিত এবং তীর ধনুক, বর্শ ও টাঙ্গি লইয়া যুদ্ধ করিত। যুদ্ধে ইহারা সহজে ক্লাস্ত হইত না ; আহারের ক্লেশে চঞ্চল হইত না এবং ক্রুদ্ধ হইলে প্রাণপণে যুদ্ধ করিত। শত্রগণ ইহঁদের অদ্ভূত যুদ্ধ-প্রণালী জানিন্ত না ; সুতরাং তাহারা ইহাদের অবাবস্থিত কঠোর যুদ্ধে বিপৰ্য্যস্ত হইত। বঙ্গোপসাগরের কূলে বা দ্বীপে যাহারা বাস করিত, তাহার সকলেই অল্প বিস্তর নৌ-বিষ্ঠায় পারদর্শী হইত। প্রতাপ জাতিধৰ্ম্মনিৰ্ব্বিশেষে ইহাদের দ্বারা নৌ-সেনা পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন। মুন্দরবনের জঙ্গলে বা নিকটবৰ্ত্তী গ্রামে যে সব কৈবর্ত, বাগদী, নমঃপূদ্র, পোদ (পৌণ্ডক) ও বেদিয়া প্রভৃতি জাতি ছিল, তাহারাও দলে দলে আসিয়া সৈন্ত দলভুক্ত হইত। এই ভাবে পাৰ্ব্বত্য জাতি, দ্বীপবাসী লোক ও জঙ্গলী সৈন্ত দ্বারা সামরিক বিভাগের বল সঞ্চয় করা তাহার সৈন্য-গঠন প্রণালীর তৃতীয় বিশেষত্ব।