পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や〉や যশোহর-খুলনার ইতিহাস মহম্মদপুর রাজধানী ছিল ; ইংরাজ-রাজত্বের প্রথম আমলে ইহা একটি বড় সহর, সেখানে যশোহর জেলার সদর মহকুমা স্থাপনের কথা হইয়াছিল। কিন্তু কাৰ্য্যতঃ তাহা হয় নাই। ১৮৩৬ খৃষ্টাব্দ হইতে ইহার পতন আরম্ভ হয়। রাজধানী গৌড়ের যাহা হইয়াছিল, মহম্মদপুরেরও তাহাই ঘটিল, এক ভীষণ মহামারীতে পুরাতন সহর ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়া গিয়াছিল। যশোহর হইতে ঢাকা যাইবার যে বড় রাস্ত মহম্মদপুর" দিয়া গিয়াছে, ১৮৩৬ অব্দে সেই রাস্তায় মহম্মদপুরে রামসাগর ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মধ্যবৰ্ত্তী স্থানে ৫৭ শত কয়েদী রাস্তার কার্য্য করিতেছিল ; হঠাৎ উহাদের মধ্যে এক ভীষণ সংক্রামক জর আরম্ভ হয়। অল্পদিনে ১৫০ কয়েদী, কুলি মৃত্যু মুখে পতিত হয় এবং ঠিকাদার ও কৰ্ম্মচারীগণ পলাইয়া যায়। স্থানীয় অধিবাসীরা কতক ব্যাধির আক্রমণে মরিল, কতক দেশ ছাড়িয়া পলাইল । সাত বৎসর ধরিয়৷ ভীষণ মহামারী মহম্মদপুর জুড়িয়া বসিয়া উহাকে শ্মশানে পরিণত করিয়া দিল । * এই ভীষণ মহামারী মহম্মদপুরে জন্মগ্রহণ করিয়া ম্যালেরিয়া দস্থ্যরূপে যশোহরের সব পুরাতন পল্লী পরিভ্রমণ করতঃ কিরূপে উহাদের ধ্বংস সাধন করিয়াছে, তাহা আমরা পরে দেখিব। এখন মহম্মদপুরের দুৰ্গতি দেখিয়া অশ্রপাত করিতেছি। মহামারী আসিবার কয়েক বৎসর পরে দুই চারিঘর পুরাতন অধিবাসী ফিরিয়া আসিল বটে, কিন্তু সে সমৃদ্ধ সহর আর রহিল না, স্থানটি ক্রমশঃ ভীষণ জঙ্গলাকীর্ণ হইয়া শূকর ব্যান্ত্রের আবাস স্থান হইয়া পড়িল । জমিদারদিগের যে সব কাছারী এখানে ছিল, অধিকাংশই স্থানান্তরে উঠিয়াগেল । কীৰ্ত্তিচিহ্নগুলি ভাঙ্গিয়া পড়িতে লাগিল; যাহা বাকী ছিল, শীত-বাত বজ্রপাতে প্রায় নিঃশেষ করিল। কানাই নগরের অপূৰ্ব্ব পঞ্চরত্ন মন্দির কিছুদিন পূৰ্ব্বে রত্নহীন হইয়াছিল; ১৩১৬ সালের ঝড়ে উহার অনেক স্থান ভগ্ন হওয়ায় বিগ্রহগুলি রামচন্ত্রের বাটতে স্থানান্তরিত হয়। তবুও কিছুদিন ছিল ; পুণ্যশ্লোক রাণী ভবানীর কৃপায় পূৰ্ব্বোক্ত বিধানে সেবার কার্য্য চলিতেছিল ; ব্যাঘ্র-শূকর-সেবিত অরণ্যাণী মধ্যে তবুও প্রাতঃসন্ধ্যায় শঙ্খ-ঘণ্টা বাজিত, দূরাগত অভ্যাগতের অন্ন জুটিত, সব গেলেও সীতারামের দেব-দেবী ছিল। মহম্মদপুরের আবালবৃদ্ধ-বনিত।

  • Hunter's Jessore, p. gia.