পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

বেড়া ভেঙে মনুষ্যস্রোত কেন আমাদের মধ্যে এসে পড়ল! কেন আমাদের লজ্জা দিচ্ছে, কেন আমাদের দায়ে ফেলে নিষ্ফল কাজে লাগাচ্ছে― পুরাতন বনেদী বংশের দারিদ্র্য কেন পৃথিবীর সামনে প্রচার করছে! তবে ওঠো- political agitation করাে―joint Stock company খােলো― শিথিল মাংসপেশী নিয়ে মাঞ্চেস্টরের সহস্র লৌহবাহুর সঙ্গে লড়তে আরম্ভ করো― দেখাে কী হয়। কিন্তু আমি যুবা বটে, তােমাদের বয়সী বটে, তবু সভায় যাই নে, চাঁদার খাতা নিয়ে ঘুরি নে, খবরের কাগজে লিখি নে— আমি নিতান্ত জীর্ণ ভারতবর্ষীয়― আমি ভাবি, কী হবে! শেষ রক্ষা করবে কে!

 অথচ ইচ্ছা আছে। যখন দেখি মানবস্রোত চলেছে, বিচিত্র কল্লোল, প্রবল গতি, মহান্ বেগ, অবিশ্রাম কর্ম, তখন আমার মন নেচে ওঠে― তখন ইচ্ছা করে সহস্র বৎসরের গৃহপ্রাচীর ভেঙে ফেলে বেরিয়ে পড়ি। আবার তখনি মনে হয়, যখন পিছিয়ে পড়ব তখন ফিরব কোথায়! যখন সবাই ফেলে যাবে তখন দাঁড়াব কোথায়! তার চেয়ে পৃথিবীপ্রান্তে এই অজ্ঞাতবাস ভালাে, এই ক্ষুদ্র সুখ এবং অগাধ শান্তি ভালাে। তখন মনে হয় আমরা কিছু অসভ্য বর্বর নই; আমরা যন্ত্র তৈরি করতে পারি নে, জগতের সমস্ত নিগূঢ় খবর বের করতে পারি নে, কিন্তু খুব ভালােবাসতে পারি, ক্ষমা করতে পারি, পরস্পরের জন্যে জায়গা ছেড়ে দিতে পারি। অপেক্ষা করে দেখা যাক পৃথিবীর এই নতুন সভ্যতা করে আমাদের কোমলতা দেখে আমাদের ভালােবাসবে, কবে আমাদের দুর্বলতা দেখে অবজ্ঞা করবে না, কবে তাদের নূতন উন্নতি, যৌবনের বলাভিমান এবং জ্ঞানাভিমান কালক্রমে নরম হয়ে আসবে এবং আমাদের স্নেহশীলতা দেখে আমাদের প্রতি স্নেহ করবে― দুর্বল

১৪০