পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তাঁর মুখের কথায় রসকষ কম। বলা বাহুল্য, সেদিন তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎকারের কাহিনী তুলে ভদ্রলোককে আর লজ্জা দিই নি। জলধর সেনের সঙ্গে দীনেন্দ্রকুমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল, অথচ দুজনেরই প্রকৃতি ছিল রীতিমত পরস্পরবিরোধী এবং এই জন্যেই বোধ করি শেষ পর্যন্ত এই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় নি। দীনেন্দ্রবাবু প্রাচীন বয়সে জলধরবাবুকে “হিমালয়” রচনার গৌরব থেকে বঞ্চিত করবার জন্যে প্রকাশ্যভাবে আক্রমণ করতেও ছাড়েন নি।

 কিন্তু আর কোন সাহিত্যিকের কাছে গিয়ে এমন রূঢ় ব্যবহার পাই নি। আধুনিক বাংলা সাহিত্য বলতে তো বুঝায় রবীন্দ্রনাথকেই। গিরিশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল ও অবনীন্দ্রনাথও আপন আপন বিভাগে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার ক’রে আছেন। ওঁদের কেউ কেউ আমার বাবার বয়সী এবং কেউ কেউ আমার বাবার চেয়েও বয়সে বড়। কিন্তু সেই তরুণ বয়সেও তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই আমি লাভ করেছি স্নেহশীল বন্ধুর মত সুমধুর ব্যবহার।

 তবে এখানে আর একটি ছোট্ট ঘটনার কথা বলতে পারি, যদিও তা বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য নয়। সে যুগের একজন অতি বিখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন স্বর্গীয় নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত। প্রথম বয়সে কবিতা লিখতেন— রবীন্দ্রনাথ ও অক্ষয়কুমার বড়ালের মত তাঁরও কাব্য-গুরু ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তারপর তিনি ঔপন্যাসিক, ছোট গল্প-লেখক, বাংলা “প্রভাতী” ও লাহোরের “ট্রিবিউন” প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদকরূপে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। কলকাতার গ্রে স্ট্রীটে ছিল তাঁর বাড়ী। আমি তাঁর লেখার এত ভক্ত ছিলুম যে, একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করবার প্রলোভন সংবরণ করতে পারলুম না। দেখা হ’ল বটে, কিন্তু ঐ মাত্র! আমি দাঁড়িয়ে রইলুম নীচের উঠানের উপরে এবং তিনি উঁকি মারলেন দোতলার

১২