পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১২ রবি-দীপিতা পারে নাই। বলের আধিক্যে বা প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তারের শক্তির আধিক্যে মানুষের যথার্থ মহত্ব বা উচ্চতা নিৰ্দ্ধারিত হয় না। সাধারণত তর্কশাস্ত্রের গ্রন্থে দেখা যায় যে বুদ্ধির দ্বারাই মানুষ পশু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । কিন্তু নিম্নস্তরের বুদ্ধি ষে পশুদেরও আছে তাহা অস্বীকার করা চলে না । বস্তুত: যে বৃত্তি মানুষকে পশু হইতে উচ্চতর করে সে বৃত্তি শক্তি নয়, সে বৃত্তি দেহ-নিরপেক্ষ আনন্দ । পশুজাতি এবং যে পৰ্য্যস্ত মানুষকে পশুজাতির অন্তভূক্ত বলিয়া মনে করা যাইতে পারে সে পৰ্য্যস্ত মানুষও, জগৎকে আপন ভোগের চক্ষুতে দেখিয়া থাকে । এই ভোগ প্রধানত ইন্দ্রিয়-লালসার অনুগামী । কিন্তু মানুষের মধ্যে আর একটি বৃত্তি আছে যাহার ফলে এই ভুবনমোহিনী প্রকৃতির শস্ততামল অঞ্চল, তাহার বিচিত্র পুষ্পরাজির বর্ণচ্ছটা, গন্ধভারমন্থর বায়ুব স্পর্শ, বিহঙ্গকুলের কলকাকলী মানুষের চিত্তকে অনিমিত্ত আনন্দের উচ্ছ্বাসে পূর্ণ করিয়া যায়। এই আনন্দেব কোন দেহজ কারণ খুজিয়া পাওয়া যায় না, বুদ্ধির স্পন্দনের মধ্যে ইহার মূল আবিষ্কার করা যায় না এবং আমাদের শক্তি সঞ্চয়েও ইহা কোন আনুকুল্য করে না । কেবলমাত্র মাতুষই এই আনন্দের অধিকারী, এইখানেই মানুষের স্বৰ্গ । আমাদের দেশের প্রাচীনের এই সৌন্দৰ্য্য-স্বাক্টর আনন্দের সম্বন্ধে অনেক গবেষণা করিয়াছেন এবং আমাদের মধ্যে এমন একটি পৃথক সত্তার সন্ধান লাভ করিয়াছেন, যেখান হইতে এই আনন্দ নিবারের ধারার ন্যায় নিরস্তর প্রক্রত হইতেছে । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এই অস্তকুৎস ইংরেজীতে তর্জমা করিতে গিয়া personality বলিয়াছেন । যেখানে আমরা আমাদের প্রয়োজনের মধ্যে আবদ্ধ, যেখানে আমরা দেহফস্ত্রের অধীন, যেগানে সুবিধা অসুবিধার পাটোয়ারী চিস্তায় আমাদের বুদ্ধি স্পন্দিত, সেখানে এই অধ্যাত্মলোকের আভাস পাওয়া যায় না । কবিগুরু বলেন যে এই অধ্যাত্মলোকের মধ্যে আমব যে আত্মার স্ফুরণ পাই তাহা স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। নরলোকের মধ্যে প্রকৃতিলোকের মধ্যে তাহা নিরস্তর আপনাকে ব্যক্ত করিতেছে, কিন্তু সেই অভিব্যক্তির মধ্যে কোন প্রয়োজনের দাবী মিটাইতে হয় না। যখন আমরা