পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واسbج এই সব কথা বলবার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। ও বলতে লাগল, গীতায় ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ বলেছেন, আত্মাকে তো কেউ মারতে পারে না । কাউকে বধ করা ও একটা কথা মাত্র । টাক। হরণ করাও সেইরকম একটা কথা । টাকা কার ? ওকে কেউ স্বষ্টি করে না, ওকে কেউ সঙ্গে নিয়ে যায় না, ও তো কারও আত্মার অঙ্গ নয়। ও আজ আমার, কাল আমার ছেলের, আর একদিন আমার মহাজনের। সেই চঞ্চল টাকা যখন তত্ত্বত কারোই নয় তখন তোমার আকর্মণ্য ছেলের হাতে না পড়ে দেশসেবকদের সেবায় যদি লাগে তাহলে তাকে নিন্দ করলেই সে কি নিন্দিত হবে ? সন্দ্বীপের মুখের কথা যখন এই বালকের মুখে শুনি তখন ভয়ে আমার বুক কাপতে থাকে। যারা সাপুড়ে তারা বাশি বাজিয়ে সাপ নিয়ে খেলুক, মরতে যদি হয় তারা জেনেশুনে মরুক। কিন্তু আহা এরা যে কাচা, সমস্ত বিশ্বের আশীৰ্বাদ এদের যে নিয়ত রক্ষা করতে চায়, এরা সাপকে সাপ না জেনে হাসতে হাসতে তার সঙ্গে খেলা করতে যখন হাত বাড়ায় তখনই স্পষ্ট বুঝতে পারি এই সাপটা কী ভয়ংকর অভিশাপ । সন্দীপ ঠিকই বুঝেছে—আমি নিজে তার হাতে মরতে পারি কিন্তু এই ছেলেটিকে তার হাত থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে আমি বঁাচাব । আমি একটু হেসে অমূল্যকে বললুম, তোমাদের দেশসেবকদের সেবার জন্তেও টাকার দরকার আছে বুঝি ? অমূল্য সগর্বে মাথা তুলে বললে, আছে বই কি । তারাই যে আমাদের রাজা, দারিদ্র্যে তাদের শক্তি ক্ষয় হয়। আপনি জানেন, সন্দীপবাবুকে ফাস্ট ক্লাস ছাড়া অন্য গাড়িতে কখনো চড়তে দিই নে । রাজভোগে তিনি কখনো লেশমাত্র সংকুচিত হন ন—র্তার এই মর্যাদা তাকে রাখতে হয় তার নিজের জন্তে নয়, আমাদের সকলের জন্তে । সন্দীপবাবু বলেন সংসারে যারা ঈশ্বর, ঐশ্বর্ষের সম্মোহনই হচ্ছে তাদের সব চেয়ে বড়ো অস্ত্র। দারিদ্র্যব্রত গ্রহণ করা তাদের পক্ষে দুঃখগ্রহণ করা নয় সে হচ্ছে আত্মঘাত । এমন সময় নিঃশব্দে সন্দীপ হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমি তাড়াতাড়ি আমার গয়নার বাক্সর উপর শাল চাপা দিলুম। সন্দীপ বাকাস্বরে জিজ্ঞাসা করলে, অমূল্যর সঙ্গে তোমার বিশেষ কথার পালা এখনো ফুরোয় নি বুঝি ? অমূল্য একটু লজ্জিত হয়ে বললে, না, আমাদের কথা হয়ে গেছে। বিশেষ কিছু না । আমি বললুম, না অমূল্য, এখনো হয় নি।