পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 8(t3) করিতেছে— যিনি এক, তিনি এই মানবসংসারের মধ্যে স্তৰ হইয়া আছেন । জন্মমৃত্যুর বাতায়াত আমাদের চোখের উপর দিয়া কেবলই আবর্তিত হইতেছে, স্থখছঃখ উঠিতেছে পড়িতেছে, পাপপুণ্য আলোকে ছায়ায় সংসারভিত্তি খচিত করিয়া দিতেছে— সমস্ত বিচিত্র, সমস্ত চঞ্চল— ইহারই অস্তরে নিরলংকার নিতৃত, সেখানে যিনি এক তিনিই বর্তমান। এই অস্থির-সমুদয়, যিনি স্থির তাহারই শান্তিনিকেতন— এই পরিবর্তনপরম্পর, যিনি নিত্য র্তাহারই চিরপ্রকাশ । দেবমানব, স্বৰ্গ-মর্ত, বন্ধন ও মুক্তির এই অনন্ত সামঞ্জস্ত— ইহাই প্রস্তরের ভাষায় ধ্বনিত। উপনিষদ এইরূপ কথাই একটি উপমায় প্রকাশ করিয়াছেন— দ্ব স্থপর্ণ সবুজ সখায় সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে । তয়োরন্তঃ পিপ্পলং স্বাস্বত্ত্যনগ্নয়ন্তোইভিচাকশীতি ॥ দুই স্বন্দর পক্ষী একত্র সংযুক্ত হইয়া এক বৃক্ষে বাস করিতেছে। তাহার মধ্যে একটি স্বাদু পিপ্পল জাহার করিতেছে, অপরটি অনশনে থাকিয় তাহ দেখিতেছে। জীবাত্মা-পরমাত্মার এরূপ সাযুজ্য, এরূপ সারূপ্য, এরূপ সালোক্য, এত অনায়াসে, এত সহজ উপমায়, এমন সরল সাহসের সহিত আর কোথায় বলা হইয়াছে ! জীবের সহিত ভগবানের সুন্দর সাম্য যেন কেহ প্রত্যক্ষ চোখের উপর দেখিয়া কথা কহিয়া উঠিয়াছে— সেইজন্ত তাহাকে উপমার জন্ত আকাশ-পাতাল হাংড়াইতে হয় নাই। অরণ্যচারী কবি বনের দুটি স্বন্দর ভানাওয়াল পাখির মতো করিয়া সসীমকে ও অসীমকে গায়ে গায়ে মিলাইয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছেন, কোনো প্রকাও উপমার ঘটা করিয়া এই নিগৃঢ় তত্ত্বকে বৃহৎ করিয়া তুলিবার চেষ্টামাত্র করেন নাই। দুটি ছোটো পাখি বেমন স্পষ্টরূপে গোচর, যেমন স্বন্দরভাবে দৃপ্তমান, তাহার মধ্যে নিত্য পরিচয়ের সরলতা যেমন একান্ত, কোনো বৃহৎ উপমায় এমনটি থাকিত না। উপমাটি ক্ষুদ্র হইয়াই সত্যটিকে বৃহৎ করিয়া প্রকাশ করিয়াছে— বৃহৎ সত্যের যে নিশ্চিত সাহস তাহা ক্ষুদ্র সরল উপমাতেই যথার্থভাবে ব্যক্ত হইয়াছে। ইহার দুটি পাখি, ডানায় ডানায় সংযুক্ত হইয়া আছে— ইহার সখা, ইহার এক বৃক্ষেই পরিবক্ত— ইহার মধ্যে একজন ভোক্তা, আর-একজন সাক্ষী ; একজন চঞ্চল, स्वiद्म-७१कखन खङ् । f ভুবনেশ্বরের মন্দিরও যেন এই মন্ত্র বহন করিতেছে— তাহা দেবালয় হইতে মানবকে মুছিয়া ফেলে নাই ; তাহ দুই পাখিকে একত্র প্রতিষ্ঠিত করিয়া ঘোষণা কিন্তু ভুবনেশ্বরের মন্দিরের আরও বেন একটু বিশেষৰ আছে। ঋষিকবির 9195