পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واج ۹ নীরদ । (স্বগত) এই মমতার কিছু অংশও যদি তার থাকত ! এত কাল যে আমি ছায়ার মতো তার কাছে কাছে ছিলুম, আমাকে ভালো নাই বাসুক, একটুকু মায়াও কি আমার উপর জড়ায় নি, যে একখানি চিঠি লিখে আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কেমন আছ ? আজও সে তার বাগানে তেমনি করে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে ? আমি চলে এসেচিবলে তার জগতের একটি তিলও শূন্য হয় নি ? কেনই বা হবে ? নিষ্ঠুর মমতাহীন জড়প্রকৃতির এই রকমই তো নিয়ম! আমি চলে এসেচি বলে কি তার বাগানে একটি বেল ফুলও কম ফুটবে ? একটি পাখিও কম করে গবে ? কিন্তু তাই বলে কি রমণীর প্রাণও সেই রকম ? নীরজা । নীরদ, তোমার মনের দুঃখ আমার কাছে প্ৰকাশ করে কি তোমার একটুও শান্তি হয় না । আমাকে কি তুমি ততটুকুও ভালোবাস না ? তবে আজ কেন তুমি আমাকে কিছু বলছি না ? কেন আপনার দুঃখ নিয়ে আপনি বসে আছ ? নীরদ । নীরজ, তুমি কি মনে করচ, আমি নলিনীকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছি ? তা মনেও করো না । তাকে আমি ভালোবাসব কি ক’রে ? তাতে আমাতে যে আকাশ পাতাল প্ৰভেদ । নীরজা । কিন্তু, কেনই বা তাকে না ভালোবাসবে ? হয়ত সে ভালোবাসবার যোগ্য । নীরদ । না নীরজ, আমি তাকে ভালোবাসি নে । আমি তোমাকে বার বার করে বলছি, আমি তাকে ভালোবাসি নে । এক কালে ভালোবাসি বলে ভ্রম হয়েছিল । কিন্তু সে ভ্ৰম একেবারে গিয়েছে । কেনই বা আমি তাকে ভালোবাসব ? সে কি আমাকে মমতা করতে পারে ? সে কি আমার প্রাণের কথা বুঝতে পারে ? তার কি হৃদয় আছে ? সে কেবল হাসতেই জানে, সে কি পরের জন্যে কখনো কেন্দেছে ? নীরজা। কিন্তু সত্যি কথা বলি নীরদ, তোমরা পুরুষ মানুষেরা আমাদের ঠিক বুঝতে পার না। তুমি হয়ত জান না তার প্রাণের মধ্যে কি আছে! হয়ত সে তোমাকে ভালোবাসে । নীরদ । তা হবে ! হয়ত তার প্রাণের কথা আমি ঠিক জানি নে । কিন্তু এ প্রতারণায় তার আবশ্যক কি ছিল ? যখন তার মুখে কেবলমাত্র একটি কথা শোনবার জন্য আমার সমস্ত প্ৰাণের আশা একেবারে উন্মুখ হয়েছিল, তখন সে কেন মুখ ফিরিয়ে অন্যমনস্কের মতো ফুল কুড়োতে লাগল ? আমার কথার কি একটি উত্তরও সে দিতে পারত না ? নীরজা। কেমন ক’রে দেবে বলো? ক্ষুদ্র বালিকা সে, সে কি ভাষা জানে যে তার প্রাণের সব কথা বলতে পারে ? সে হয়ত ভাবলে, আমার মনের কথা আমি কিছুই ভালো করে বলতে পারব না, সেই জন্যেই তুমি যদি আমার কথা ঠিক না বুঝতে পাের, যদি দৈবাৎ আমার একটি কথাও অবিশ্বাস কর, তা श्न (न कि यक्षों ! केि व्लछों ! নীরদ । কিন্তু আমি কি তার ভাবেও কিছু বুঝতে পারতুম না ! নীরজা । তোমরা পুরুষরা যখন একবার নিজের হৃদয়ের কথা ভাব, তখন পরের হৃদয়ের দিকে একবার চেয়ে দেখতেও পার না। নিজের সুখ দুঃখের সঙ্গে যতটুকু যোগ সেইটুকুই দেখতে পাও, তার সুখ দুঃখ চােখে পড়েও না। সে যে কি ভাবে কথা কয় না, সে যে কি দুঃখে চলে যায়, তা তোমরা দেখ না- তোমরা কেবল ভাব আমার সঙ্গে কথা কইলে না, আমার কাছ থেকে চলে গেল । নীরদ । তা হবে ! আমরা স্বার্থপর, সেই জন্যেই আমরা অন্ধ । কিন্তু ও কথা আর কেন ? ও-সব কথা আমি মন থেকে একেবারে তাড়িয়ে দিয়েছি। আর তো আমি তাকে ভালোবাসি নে ; ভালোবাসতে পারিও না ! তবে ও কথা থাক। আর একটা কথা বলা যাক। দেখা নীরজ, যদিও আমাদের বিবাহের দিন কাছে এসেছে, তবু মনে হচ্ছে যেন এখনো কত দিন বাকি আছে! সময় যেন ऊठञ् छ् न ! নীরজা । (নীরদের হাত ধরিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া) নীরদ, আমার চােখে জল আসছে, কিছু মনে করো না । বিবাহের দিন তো কাছে আসছে, এই সময় একবার মনে করে দেখ আমরা কি করছিকোথায় যাচ্ছি। দেখো ভাই, আমাদের এ বাসরঘর শ্মশানের উপর গড়া নয়ত! তার চেয়ে এসো,