পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eo | রবীন্দ্র-রচনাবলী । তঁহার সঙ্গে কাশী গেল। মা কহিলেন, “বাবা, ঘরে কি বউ আসিবে না ?” নলিনাক্ষ বিপদে পড়িল, কহিল, “কাজ কী মা, বেশ আছি।” মা বুঝিলেন, নলিন অনেকটা ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু, তাই বলিয়া ব্ৰহ্মপরিবারের বাহিরে বিবাহ করিতে প্ৰস্তুত নহে। ব্যথিত হইয়া তিনি কহিলেন, “বাছা, আমার জন্যে তুই চিরজীবন সন্ন্যাসী হইয় থাকিবি, এ তো কোনােমতেই হইতে পারে না। তোর যেখানে রুচি তুই বিবাহ কর বাবা, আমি কখনও जoखि कवि ना |” নলিন দুই-এক দিন একটু চিন্তা করিয়া কহিল, “তুমি যেমন চাও আমি তেমনি একটি বউ আনিয়া তোমার দাসী করিয়া দিব ; তোমার সঙ্গে কোনো বিষয়ে অমিল হইবে, তোমাকে দুঃখ দিবে, এমন মেয়ে আমি কখনােই ঘরে আনিব না।” এই বলিয়া নলিন পাত্রীর সন্ধানে বাংলাদেশে চলিয়া আসিয়াছিলেন। তাহার পরে মাঝখানে ইতিহাসে একটুখানি বিচ্ছেদ আছে। কেহ বলে, গোপনে সে এক পল্লীতে গিয়া কোন এক অনাথাকে বিবাহ করিয়াছিল এবং বিবাহের পরেই তাহার স্ত্রীবিয়োগ হইয়াছিল । কেহ বা তাহাতে সন্দেহ প্ৰকাশ করে। অক্ষয়ের বিশ্বাস এই যে, বিবাহ করিতে আসিয়া শেষ মুহুর্তে সে পিছাইয়াছিল। যাহাই হউক, অক্ষয়ের মতে, এখন নিশ্চয়ই নলিনাক্ষ যাহাকেই পছন্দ করিয়া বিবাহ করবে তাহার মা তাহাতে আপত্তি না করিয়া খুশিই হইবেন। হেমনলিনীর মতো আমন মেয়ে নলিনাক্ষ কোথায় । পাইবে ? আর যাই হউক, হেমের যেরূপ মধুর স্বভাব তাহাতে সে যে তাহার শাশুড়িকে যথেষ্ট ভক্তিশ্রদ্ধা করিয়া চলিবে, কোনোমতেই তাহাকে কষ্ট দিবে না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। নলিনাক্ষ দুদিন ভালো করিয়া হেমকে দেখিলেই তাহা বুঝিতে পরিবেন। অতএব অক্ষয়ের পরামর্শ এই যে, কোনোমতে দুজনের পরিচয় করাইয়া দেওয়া হউক । 8O অক্ষয় চলিয়া যাইবামাত্র যোগেন্দ্ৰ দোতলায় উঠিয়া গেল। দেখিল, উপরের বসিবার ঘরে হেমনলিনীকে কাছে বসাইয়া অন্নদাবাবু গল্প করিতেছেন। যোগেন্দ্রকে দেখিয়া অন্নদা একটু লজ্জিত হইলেন। আজ চায়ের টেবিলে তঁহার স্বাভাবিক শান্তভােব নষ্ট হইয়া হঠাৎ তাহার রোষ প্রকাশিত হইয়াছিল, ইহাতেও তাহার মনে মনে ক্ষোভ ছিল। তাই তাড়াতাড়ি বিশেষ সমাদরের স্বরে কহিলেন, “এসো যোগেন্দ্ৰ, বোসো ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, তোমরা যে কোনোখানে বাহির হওয়া একেবারেই ছাড়িয়া দিয়াছ। দুজনে দিনরাত্রি ঘরে বসিয়া থাকা কি ভালো ?” অন্নদা কহিলেন, “ঐ শোনো। আমরা তো চিরকাল এইরকম কোণে বসিয়াই কাটাইয়া দিয়াছি। হেমকে তো কোথাও বাহির করিতে হইলে মাথা-খোড়াখুঁড়ি করিতে হইত।” হেম কহিলু, “কেন বাবা আমার দোষ দাও ? তুমি কোথায় আমাকে লইয়া যাইতে চাওঁ, (a-N " হেমনলিনী আপনার প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়াও সবলে প্রমাণ করিতে চায় যে, সে মনের মধ্যে একটা শোক চাপিয়া ধরিয়া ঘরের মাটি আঁকড়াইয়া পড়িয়া নাই- তাহার চারি দিকে যেখানে যাহা-কিছু হইতেছে। সব বিষয়েই যেন তাহার ঔৎসুক্য অত্যন্ত সজীব হইয়া আছে। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, কাল একটা মিটিঙ আছে, সেখানে হেমকে লইয়া চলো না ।” অন্নদা জানিতেন, মিটিঙের ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করিতে হেমনলিনী চিরদিনই একান্ত অনিচ্ছা ও সংকোচ অনুভব করে ; তই তিনি কিছু না বলিয়া একবার হেমের মুখের দিকে চাহিলেন। হেম হঠাৎ একটা অস্বাভাবিক উৎসাহ প্রকাশ করিয়া কহিল, “মিটিঙ ? সেখানে কে বক্তৃতা দিবে। wif "