পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ»ዓ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মাধব । তা ভাই রাগ করিস কেন ? যে দেশের যেমন ব্যবস্থা। আমাদের দেশে তো রাস্তা নেই বললেই হয়—বাকীচোরা গলি, সে তো গোলকধাঁধা । আমাদের রাজা বলে, খোলা রাস্ত না থাকাই ভালো—রাস্তা পেলেই প্রজার বেরিয়ে চলে যাবে। এদেশে উলটো, যেতেও কেউ ঠেকায় না, আসতেও কেউ মানা করে না—তবু মানুষঙু তো ঢের দেখছি—এমন খোলা পেলে আমাদের রাজ্য উজাড় হয়ে যেত । বিরাজদত্ত । ওহে মাধব, তোমার ওই একটা বড়ে দোষ । মাধব | কী দোষ দেখলে ? বিরাজদত্ত। নিজের দেশের তুমি বড়ো নিন্দে কর । খোলা রাস্তাটাই বুধি ভালো হল ? বলে তো ভাই ভদ্রসেন, খোলা রাস্তাটাকে বলে কিনা ভালো । ভদ্রসেন। ভাই বিরাজদত্ত, বরাবরই তো দেখে আসছ মাধবের ওই এক রকম ত্যাড়া বুদ্ধি। কোন দিন বিপদে পড়বেন–রাজার কানে যদি যায় তাহলে ম’লে ওকে শ্মশানে ফেলবার লোক পাবেন না । বিরাজদত্ত। আমাদের তো ভাই এই খোলা রাস্তার দেশে এসে অবধি খেয়ে শুয়ে সুখ নেই—দিনরাত গা-বিনঘিন করছে। কে আসছে কে যাচ্ছে তার কোনো ঠিকঠিকানাই নেই– রাম রাম । ভদ্রসেন । সেও তো ওই মাধবের পরামর্শ গুনেই এসেছি । আমাদের গুষ্টিতে এমন কখনো হয় নি। আমার বাবাকে তো জান – কতবড়ো মহাত্মা লোক ছিল— শাস্ত্রমতে ঠিক উনপঞ্চাশ হাত মেপে গণ্ডি কেটে তার মধ্যেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়ে দিলে—একদিনের জন্যে তার বাইরে পা ফেলে নি। মৃত্যুর পর কথা উঠল ওই উনপঞ্চাশ হাতের মধ্যেই তো দাহ করতে হয়—সে এক বিষম মুশকিল—শেষকালে শাস্ত্রী বিধান দিলে উনপঞ্চাশে যে দুটো অঙ্ক আছে তার বাইরে যাবার জো নেই, অতএব ওই চার নয় উনপঞ্চাশকে উলটে নিয়ে নয় চার চুরানব্বই করে দাও—তবেই তো তাকে বাড়ির বাইরে পোড়াতে পারি, নইলে ঘরেই দাহ করতে হত। বাবা, এত অঁাটাঞ্জাটি ! এ কি যে-সে দেশ পেয়েছ ! বিরাজদত্ত। বটেই তো, মরতে গেলেও ভাবতে হবে এ কি কম কথা । ভদ্রসেন। সেই দেশের মাটিতে শরীর, তবু মাধব বলে কিনা, খোলা রাস্তাই ভালো । [ সকলের প্রস্থান সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ ঠাকুরদা। ওরে দক্ষিনে হাওয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিতে হবে—হার মানলে চলবে না—আজি সব রাস্তাই গানে ভাসিয়ে দিয়ে চলব।