পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ ২৩৭ সকলে । আমরা অদ্ভূত গল্প গুনব । শেখর। আচ্ছা, তাহলে চলে, কোপাই নদীর ধার দিয়ে একবার পারুলডাঙায় তোমাদের খুঁরিয়ে নিয়ে আসি গে। চলতে চলতে গল্প হবে। সন্ন্যাসী। এই দেখো, ওর সঙ্গে আমরা পারব না—আমাদের সব চেলা ভাঙিয়ে নিলে । শেখর। ভাঙিয়ে নেওয়া সহজ, কিন্তু টিকিয়ে রাখা শক্ত। এখনই ফিরে আসবে। [ বালকদলের সঙ্গে শেখরের প্রস্থান , সন্ন্যাসী । বাবা উপনন্দ, তোমার প্রভূর কী নাম ছিল ? উপনন্দ । সুরসেন । সন্ন্যাসী । সুরসেন ! বীণাচার্য ! উপনন্দ । ই ঠাকুর, তুমি তাকে জানতে ? সন্ন্যাসী । আমি তার বীণা শুনব আশা করেই এখানে এসেছিলেম । উপনন্দ । তার কি এত খ্যাতি ছিল ? ঠাকুরদাদা। তিনি কি এত বড়ো গুণী ? তুমি তার বাজনা শোনবার জন্তেই এদেশে এসেছ ? তবে তো আমরা তাকে চিনি নি ? সন্ন্যাসী । , এখানকার রাজা ? ঠাকুরদাদা । এখানকার রাজা তো কোনোদিন তাকে জানেন নি, চক্ষেও দেখেন নি। তুমি তার বীণা কোথায় শুনলে ? সন্ন্যাসী । তোমরা হয়তো জান না বিজয়াদিত্য বলে একজন রাজা— ঠাকুরদাদা । বল কী ঠাকুর । আমরা অত্যন্ত মূখ, গ্রাম্য, তাই বলে বিজয়াদিত্যের নাম জানব না এও কি হয় ? তিনি যে আমাদের চক্রবর্তী সম্রাট। সন্ন্যাসী। তা হবে। তা সেই লোকটির সভায় একদিন সুরসেন বীণা বাজিয়েছিলেন, তখন শুনেছিলেম । রাজা তাকে রাজধানীতে রাখবার জন্তে অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই পারেন নি। ঠাকুরদাদা । হায় হায়, এত বড়ো লোকের আমরা কোনো আদর করতে পারি নি । সন্ন্যাসী । বাবা উপনন্দ, তোমার সঙ্গে তার কী রকমে সম্বন্ধ হল ? উপনন্দ। ছোটো বয়সে আমার বাপ মারা গেলে আমি অস্ত দেশ থেকে এই নগরে আশ্রয়ের জন্তে এসেছিলেম। সেদিন শ্রাবণমাসের সকাল বেলায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছিল, আমি লোকনাথের মন্দিরের এককোণে দাড়াব বলে প্রবেশ করছিলেম।