暫 রবীন্দ্র-রচনাবলী । ویه ۶) যার চেয়ে দূরে তিনি সরে না যান। এই দূরত্বের বেদন আমরা স্পষ্ট করে উপলব্ধি করি নে বটে কিন্তু এই দূরত্বের ভারে আমাদের প্রতিদিনের অস্তিত্ব, আমাদের ধরদুয়ার, কাজকর্ম, আমাদের সমস্ত সামাজিক সম্বন্ধ ভারাক্রাস্ত হয়ে পড়ে। অথচ ষে সমুদ্রপারের জন্তে আমরা কেঁদে বেড়াচ্ছি সে পারটা যে কত কাছে— এমন কি, এপারের চেয়েও যে সে কাছে, সে-কথা, ধারা জানেন, তারা অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেন। শুনলে হঠাৎ আমাদের চমক লাগে—মনে হয় এত কাছের কথাকেও আমরা এতই দূর করে জেনেছিলুম। একেই বলেছিলুম অগম্য, অপার, অসাধ্য। ধারা সমুদ্র পার হয়েছেন তারা কী বলেন । তারা বলেন, এষাস্ত পরমাগতি: এষাস্ত পরমাসম্পং, এযোহন্ত পরমোলোক, এষোহস্ত পরম আনন্দ । এষঃ মানে ইনি –এই সামনেই যিনি, এই কাছেই যিনি আছেন । অস্ত মানে ইহার—-সেও খুব নিকটের ইহার । ইনিই হচ্ছেন ইহার পরম গতি । যিনি যার পরম গতি তিনি । তার থেকে লেশমাত্র দূরে নেই। এতই কাছে যে তাকে ইনি বললেই হয়, তার নাম করবারও দরকার নেই—“এই ষে ইনি” বলা ছাড়া তার আর কোনো পরিচয় দেবার প্রয়োজন হয় না । ইনিই হচ্ছেন ইহার সমস্তই। ইনি যে কে এবং ইহার যে কাহার সে আর বলাই হল না । সমুদ্রের এপারে ষে আছে সে তো ওপারের লোককে এষঃ বলে না, ইনি বলে না । ইনি হচ্ছেন ইহার পরমাগতি । আমরা যে চলি, আমাদের চালায় কে ? আমরা মনে করি টাকা আমাদের চালায়, খ্যাতি আমাদের চালায়, মানুষ আমাদের চালায় ; যিনি পার হয়েছেন তিনি বলেন ইনিই ইহার গতি—এর টানেই এ চলেছে—টাকার টান, থ্যাতির টান, মামুষের টান, সব টানের মধ্যে পরম টান হচ্ছে এর—সব টান যেতে পারে কিন্তু সে টান থেকেই যায়—কেননা সব যাওয়ার মধ্যেই তার কাছে যাওয়ার তাগিদ রয়েছে। টাকাও বলে না তুমি এইখানেই থেকে যাও, খ্যাতিও বলে ন, মাঙ্গুষও বলে না—সবাই বলে তুমি চলে—যিনি পরমাগতি তিনিই গতি দিচ্ছেন, আর কেউ যে পথের মধ্যে বরাবরের মতো আটক করে রাখবে এমন সাধ্য আছে কার ? باني o আমরা হয়তো মনে করতে পারি পৃথিবী যে আমাকে টানছে সেট পৃথিবীরই টান, কিন্তু তাই যদি হবে, পৃথিবীকে টানে কে ? স্বর্ধকে কে আকর্ষণ করছে ? এই যে বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের জোরে গ্রন্থতারানস্কত্রকে ঘোরাচ্ছে, কাউকে নিশ্চল থাকতে দিচ্ছে না। সেই বিরাট কেন্দ্রাকর্ষণের কেন্দ্র তো পৃথিবীতে নেই। একটি পরমাগতি আছে, ষ আমারও গতি, পৃথিবীরও গতি, স্বর্ষেরও গতি ।
