পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G \Ogre এই-যে আমাদের মানুষটি, একে আমরা শুধু বলি “সে । বাইরের লোক কেউ নাম জিগেস করলে আমরা দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হাসি। পূপে বলে, আন্দাজ করে বলে দেখি, প দিয়ে আরম্ভ। কেউ বলে প্রিয়নাথ, কেউ বলে পঞ্চানন, কেউ বলে পাঁচকড়ি, কেউ বলে পীতাম্বর, কেউ বলে পরেশ ; কেউ বলে পীটার্স কেউ বলে প্রেস্কট, কেউ বলে পীরবক্স, কেউ বলে পীয়ার ধা। এইখানে এসে কলম "থামতেই একজন বললে, গল্প চলবে তো ? কার গল্প এ তে রাজপুত্তর নয়, এ হল মানুষ, এ খায়-দায় ঘুমোয়, আপিসে যায়, সিনেমা দেখবারও শাখ আছে। দিনের পর দিন যা সবাই করছে তাই এর গল্প। মনের মধ্যে যদি মানুষটাকে স্পষ্ট করে গড়ে তোল তা হলে দেখতে পাবে, এ যখন দোকানের রোয়াকে বসে রসগোল্লা খায় আর তার রস ঠোঙার ছিদ্র দিয়ে অজানিতে পড়তে থাকে তার ময়লা ধুতির উপর, সেটাই গল্প । যদি জিগেস কর "তার পরে তা হলে বলব, তার পরে ও ট্রামে চড়ে বসল, হঠাৎ জ্ঞান হল পয়সা নেই, টপ করে লাফিয়ে পড়ল। তার পরে ? তারপরে এই রকমই আরো কত কী-বড়োবাজার থেকে বহুবাজার, বহুবাজার থেকে নিমতলা । ওদের মধ্যে একজন বললে, যা সৃষ্টিছাড়া, বড়োবাজারে বহুবাজারে, এমনকি, নিমতলাতেও যার १ाटि (नई, उा निश कि शब्र श्श नीं । আমি বললুম, যদি হয় তা হলেই হয়, না হলে হয়ই না। সে বললে, হােক তবে । হােক-না একেবারে যা ইচ্ছে তাই ; মাথা নেই, মুণ্ডু নেই, মানে নেই, ୩ନୀ (ମଝି, ଐରାଗ ଐତି-ବିଂହୁ । এটা হল স্পর্ধা। বিধাতার সৃষ্টি, নিয়মের রসারসি দিয়ে কষেবাধা, যেটা হবার সেটা হবেই। এ তো সহ্য হয় না। একঘেয়ে বিধানের সৃষ্টিকর্তা পিতামহকে এমন ক্ষেত্রে ঠাট্টা করে নেওয়া যাক যেখানে শান্তির ভয় নেই। এ তো তার নিজের এলেকা নয় । আমাদের সে ছিল কোণে বসে। কানে কানে বললে, দাদা, লেগে যাও । আমার নাম দিয়ে যা-খুশি চালিয়ে দিতে পারো, ফৌজদারি করব না। সে মানুষটির পরিচয় দেওয়ার দরকার আছে। পুপূদিদিমণিকে ধারাবেয়ে যে গল্প বলে যাচ্ছি। সেই গল্পের মূল অবলম্বন হচ্ছে একটি সর্বনামধারী, সে কেবলমাত্র বাক্য দিয়ে তৈরি । সেইজন্যে একে নিয়ে যা-তা করা সম্ভব, কোনোখানে এসে কোনো প্রশ্নের ইচোট খাবার আশঙ্কা নেই। কিন্তু অনাসৃষ্টির চক্ষুষ প্রমাণ দেবার জন্যে একজন শরীরধারী জোগাড় করতে হয়েছে। সাহিত্যের মামলায় কেন্সটা যখনই বড়ো বেশি বেসামাল হয়ে পড়ে তখনই এ লোকটা সাক্ষ্য দিতে প্ৰস্তুত। কিছুই বাধে না । আমার মতো মোক্তারের ইশারা পেলেই সে অমানিমুখে বলতে পারে যে, কঁচড়াপাড়ার কুম্ভমেলায় গঙ্গাস্নান করতে গিয়ে কুমীরে ধরেছিল তার টিকির ডগা । সেটা গেল তলিয়ে, বেঁটা-ছেড়া মানবদেহের বাকি অংশটুকু উঠে এসেছে। ডাঙায় ; আরো একটু চোখ টিপে দিলে সে নির্লজ হয়ে বলতে পারে, মানোয়ারী জাহাজের ডুবুরি গোরা সাত মাস পাক ঘেঁটে গোটা পাঁচ-ছয় চুল ছাড়া বাকি টিকিটা উদ্ধার করে এনেছে, বকশিশ পেয়েছে এককালীন সোয়া তিন টাকা। পুপূদিদি তবু যদি বলে 'তার পরে তা হলে তখনই শুরু করবে, নীলরতন ডাক্তারের পায়ে ধরে বললে, দোহাই ডাক্তারবাবু, ওষুধ দিয়ে টিকিটা জোড়া দিয়ে লাগিয়ে গাঁও, নইলে তেলের কাছে প্রসাদী ফুল বঁধতে পারছি না। তিনি সন্ন্যাসীদত্ত বজজটী মলম লাগিয়ে দিতেই টিকিটা একেবারে মরিয়া হয়ে বেড়ে চলেছে, অফুরান একটা কেঁচোর মতো। পাগড়ি পরলে পাগড়িটা বেলুনের মতো কেঁপে উঠতে থাকে, মাথার বালিশটা উপরে চুড়ে তৈরি হতে থাকে দৈত্যপুরীর ব্যাঙের ছাতার মতো। বাধা মইনে দিয়ে নাপিত রাখতে হল। গ্রহরে প্রহরে তাকে দিয়ে ব্ৰহ্মতালু চাচিয়ে নিতে হচ্ছে। তবু যদি শ্রোতার কৌতুহল না মেটে তা হলে সে করুণ মুখ করে বলতে থাকে যে, মেডিক্যাল