পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় S খোলো মা, একবার মুখখানি দেখে নিই।” দরজা খুলে চমকে উঠলেন গিমিঠাকরুন, ‘ওমা, ও কে গো ! আমাদের বিনোদিনী যে ! কে করলে ওর এ দশা 'কুকুরটা ওকে দেখেই লাফিয়ে উঠল, ওর বুকে দুই পা তুলে কাই-কাই করতে লাগল আনন্দে। বিনোদিনী একবার তার গলা জড়িয়ে ধরলে দুই হাতে, তার পরেই ওকে সরিয়ে দিল, জোরে ঠেলা দিয়ে । গোলেমালে কোথায় মেয়েটি পালালে ঝড়ের আড়ালে, দেখা গেল না। চারিদিকে সন্ধানে দুটল লোকজন। বড়োবাবু স্বয়ং হঁকতে থাকলেন বিনুবিনু), মিলল না কোনো সাড়া। মুকুন্দ রইল। তার সেকেন্ড ক্লাসের গাড়িতে, রুমালে মুখ লুকিয়ে একেবারে চুপ। মেলগাড়ি কখন গেল বেরিয়ে। বৃটির বিরাম নেই। SO আমাদের দেহের মধ্যে নানাপ্রকার শরীর যন্ত্রে মিলে বিচিত্র কর্মপ্ৰণালীর যোগে শক্তি পাচ্ছে প্ৰাণ সমগ্রভাবে । আমরা তাদের বহন করে চলেছি কিছুই চিন্তা না করে। তাদের কোনো জায়গায় বিকার ঘটলে তবেই তার দুঃখবোধে দেহব্যবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ করে চেতনা জেগে ওঠে । আমাদের ভাষাকেও আমরা তেমনি দিনরাত্রি বহন করে নিয়ে চলেছি। শব্দপুঞ্জে বিশেষ্যে বিশেষণে সর্বনামে বচনে লিঙ্গে সন্ধিপ্রত্যয়ে এই ভাষা অত্যন্ত বিপুল এবং জটিল । অথচ তার কোনো ভার নেই। আমাদের মনে, বিশেষ কোনো চিন্তা নেই । তা নিয়মগুলো কোথাও সংগত কোথাও অসংগত, তা নিয়ে পদে পদে বিচার করে চলতে হয় না । আমাদের প্রাণশক্তি যেমন প্ৰতিনিয়ত বৰ্ণে গন্ধে রূপে রসে বোধের জাল বিস্তার করে চলেছে, আমাদের ভাষাও তেমনি সৃষ্টি করছে কত ছবি, কত রস- তার ছন্দে, তার শব্দে । কত রকমের তার জাদুশক্তি। মানুষ যখন কালের নেপথ্যে অন্তর্ধন করে তখনো তার বাণীর লীলা সজীব হয়ে থাকে ইতিহাসের রঙ্গভূমিতে । আলোকের রঙ্গশালায় গ্ৰহতারার নাট্য চলেছে। অনাদিকাল থেকে। তা নিয়ে বিজ্ঞানীর বিস্ময়ের অন্ত নেই। দেশকালে মানুষের ভাষারঙ্গের সীমা তার চেয়ে অনেক সংকীর্ণ, কিন্তু বাণীলোকের রহস্যের বিস্ময়করতা এই নক্ষত্ৰলোকের চেয়ে অনেক গভীর ও অভাবনীয়। নক্ষত্ৰলোকের তেজ বহু লক্ষ তারা চলার পথ পেরিয়ে আজ আমাদের চোখে এসে পৌঁছল ; কিন্তু তার চেয়ে আরো অনেক বেশি আশ্চর্য যে, আমাদের ভাষা নীহারিকা চক্ৰে ঘূর্ণ্যমান সেই নক্ষত্ৰলোককে স্পর্শ করতে পেরেছে । আমাকে কোনো ভাষাতাত্ত্বিক অনুরোধ করেছিলেন আমার এই প্রকাশোমুখ বইখানিতে আমি যেন ভাষাবিজ্ঞানের ভূমিকা করে কাজ আরম্ভ করি। তার যে উত্তর দিয়েছিলুম নিয়ে তা উদ্যুত করে দিই। সেটা পড়লে পাঠকেরা বুঝবেন আমার বইখানি তত্ত্বের পরিচয় নিয়ে নয়, রাপের পরিচয় নিয়ে।-- আমার পক্ষে যা সবচেয়ে দুঃসাধ্য তাই তুমি আমাকে ফরমাশ করেছি। অর্থাৎ মানুষের মূর্তির ব্যাখ্যা করবার ভার যে নিয়েছে তাকে তুমি মানুষের শরীরবিজ্ঞানের উপদেষ্টর মঞ্চে চড়াতে চাও। অহংকারে মানুষকে নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে অন্ধ করে- মধুসূদনের কাছে আমার প্রার্থনা এই যে, দর্পহরণ করবার প্রয়োজন ঘটবার পূর্বেই তিনি আমাকে যেন কৃপা করেন। আমার এ গ্রন্থে ব্যাকরণের বন্ধুর পথ একেবারেই এড়াতে পারি নি, প্রতি মুহুর্তে পদস্খলনের আশঙ্কায় কম্পাদিত আছি। ভয় আছে, পাছে আমার স্পৰ্থ দেখে তাত্ত্বিকেরা হয় কৃষ্টি 'হায় কুটি বলে বক্ষে করাঘাত করতে থাকেন। কোনো কোনো বিখ্যাত রূপশিল্পী শারীরতত্বের যাথা তথ্যে ভুল করেও চিত্রকলায় প্ৰশংসিত হয়েছেন, আমার বইখানি যদি সেই সৌভাগ্য লাভ কয়ে তা হলেই ধন্য হব। VI Y \Obr