পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २७S আঘাত পাইয়াছে এবং চারুকে দেখাইতে চাহে না বলিয়াই এ কাগজগুলি সে একেবারে গোপন করিয়া গেছে। চারু আরামের জন্য অতি নিভৃতে যে একটি ক্ষুদ্র সাহিত্যনীড় রচনা করিতেছিল হঠাৎ প্রশংসা-শিলাবৃষ্টির একটা বড়ো রকমের শিলা আসিয়া সেটাকে একেবারে স্থলিত করিবার জো করিল। চারুর ইহা একেবারেই ভালো লাগিল না। ভূপতি চলিয়া গেলে চারু তাহার শোবার ঘরের খাটে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল ; সম্মুখে সরোরুহ এবং বিশ্ববন্ধু খোলা পড়িয়া আছে। খাতা-হাতে অমল চারুকে সহসা চকিত করিয়া দিবার জন্য পশ্চাৎ হইতে নি:শব্দপদে প্রবেশ করিল। কাছে আসিয়া দেখিল, বিশ্ববন্ধুর সমালোচনা খুলিয়া চারু নিমগ্নচিত্তে বসিয়া আছে। পুনরায় নি:শব্দপদে অমল বাহির হইয়া গেল। ‘আমাকে গালি দিয়া চারুর লেখাকে প্রশংসা করিয়াছে বলিয়া আনন্দে চারুর আর চৈতন্য নাই।’ মুহূর্তের মধ্যে তাহার সমস্ত চিত্ত যেন তিক্তস্বাদ হইয়া উঠিল। চারু যে মূর্থের সমালোচনা পড়িয়া নিজেকে আপন গুরুর চেয়ে মস্ত মনে করিয়াছে, ইহা নিশ্চয় স্থির করিয়া অমল চারুর উপর ভারি রাগ করিল। চারুর উচিত ছিল কাগজখানা টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া আগুনে ছাই করিয়া পুড়াইয়া ফেলা । চারুর উপর রাগ করিয়া অমল মন্দার ঘরের দ্বারে দাড়াইয়া সশব্দে ডাকিল, “মন্দা-বউঠান ।” মন্দা । এসে ভাই, এসে। না চাইতেই যে দেখা পেলুম। আজ আমার কী ভাগ্যি । অমল। আমার নূতন লেখা দু-একটা শুনবে ? মন্দা । কতদিন থেকে ‘শোনাব শোনাব’ করে আশা দিয়ে রেখেছ কিন্তু শোনাও না তো । কাজ নেই ভাই– আবার কে কোন দিক থেকে রাগ করে বসলে তুমিই বিপদে পড়বে— আমার কী। অমল কিছু তীব্রস্বরে কহিল, “রাগ করবেন কে। কেনই বা রাগ করবেন। আচ্ছা সে দেখা যাবে, তুমি এখন শোনোই তো।” মন্দা যেন অত্যন্ত আগ্রহে তাড়াতাড়ি সংযত হইয়। বসিল । অমল সুর করিয়া সমারোহের সহিত পড়িতে আরম্ভ করিল। অমলের লেখা মন্দার পক্ষে নিতান্তই বিদেশী, তাহার মধ্যে কোথাও সে কোনো কিনারা দেখিতে পায় না। সেইজন্যই সমস্ত মুখে আনন্দের হাসি আনিয়া অতিরিক্ত