গল্পগুচ্ছ '©ዓ¢ ভবানীচরণ পাইয়া মনে করিলেন ভারি জিতিয়াছি। তারাপদর দল সদরে চলিয়া গেল। উভয়পক্ষের মধ্যে আর দেখাসাক্ষাৎ রহিল না। २ শু্যামাচরণের বিশ্বাসঘাতকতা ব্রজসুন্দরীকে শেলের মতো বাজিল। খামাচরণ অন্যায় করিয়া কর্তার উইল চুরি করিয়া ভাইকে বঞ্চিত করিল এবং পিতার বিশ্বাসভঙ্গ করিল ইহা তিনি কোনোমতেই ভুলিতে পারিলেন না। তিনি যতদিন বাচিয়া ছিলেন প্রতিদিনই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়৷ বারবার করিয়া বলিতেন, ‘ধর্মে ইহা কখনোই সহিবে না।’ ভবানীচরণকে প্রায়ই প্রতিদিন তিনি এই বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন যে, “আমি আইন-আদালত কিছুই বুঝি না, আমি তোমাকে বলিতেছি, কর্তার সে উইল কখনোই চিরদিন চাপা থাকিবে না। সে তুমি নিশ্চয়ই ফিরিয়া পাইবে!’ বরাবর মাতার কাছে এই কথা শুনিয়া ভবানীচরণ মনে অত্যন্ত একটা ভরসা পাইলেন। তিনি নিজে অক্ষম বলিয়া এইরূপ আশ্বাসবাক্য র্তাহার পক্ষে অত্যন্ত সাত্বনার জিনিস। সতীসাধ্বীর বাক্য ফলিবেই, যাহা তাহারই তাহা আপনিই র্তাহার কাছে ফিরিয়া আসিবে এ কথা তিনি নিশ্চয় স্থির করিয়া বসিয়া রহিলেন । মাতার মৃত্যুর পরে এ বিশ্বাস তাহার আরো দৃঢ় হইয়া উঠিল— কারণ মৃত্যুর বিচ্ছেদের মধ্য দিয়া মাতার পুণ্যতেজ ৰ্তাহার কাছে আরো অনেক বড়ো করিয়া প্রতিভাত হইল। দারিদ্র্যের সমস্ত অভাব পীড়ন যেন তাহার গায়েই বাজিত না । মনে হইত, এই-যে অন্নবস্ত্রের কষ্ট, এই-ষে পূর্বেকার চালচলনের ব্যত্যয়, এ যেন দুদিনের একটু অভিনয়মাত্র— এ কিছুই সত্য নহে। এইজন্ত সাবেক ঢাকাই ধুতি ছিড়িয়া গেলে যখন কম দামের মোটা ধুতি তাহাকে কিনিয়া পরিতে হইল তখন তাহার হাসি পাইল। পূজার সময় সাবেক কালের ধুমধাম চলিল না, নমোনম করিয়া কাজ সারিতে হইল। অভ্যাগতজন এই দরিদ্র আয়োজন দেখিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সাবেক কালের কথা পাড়িল। ভবানীচরণ মনে মনে হাসিলেন ; তিনি ভাবিলেন, ইহারা জানে না এ-সমস্তই কেবল কিছুদিনের জন্ত— তাহার পর এমন ধুম করিয়া একদিন পূজা হইবে যে, ইহাদের চক্ষুস্থির হইয়া যাইবে । সেই ভবিষ্যতের নিশ্চিত সমারোহ তিনি এমনি প্রত্যক্ষের মতো দেখিতে পাইতেন যে, বর্তমান দৈন্য র্তাহার চোখেই পড়িত না। এ সম্বন্ধে তাহার আলোচনা করিবার প্রধান মাহুষটি ছিল নোটো চাকর। কতবার পূজোৎসবের দারিত্র্যের মাঝখানে বসিয়া প্রভু-ভৃত্যে, ভাবী স্বদিনে কিরূপ আয়োজন করিতে হইবে তাহারই বিস্তারিত আলোচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন। এমন