পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQ8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী জগৎ । তা যা বল বাবা, আসছে। বৈশাখে মেয়েদের বিয়ে দেবই ! পুরবালা। হা মা, আমারও সেই মত। মেয়েমানুষের সকাল-সকাল বিয়ে হওয়াই ভালো। শুনিয়া অক্ষয় তাহাকে জানাস্তিকে বলিয়া লইল, “তা তো বটেই! বিশেষত যখন একাধিক স্বামী শাস্ত্রে নিষেধ, তখন সকাল-সকাল বিয়ে করে সময়ে পুষিয়ে নেওয়া চাই।” পুরবালা। আঃ কী বকছ! মা শুনতে পাবেন। জগৎ । রসিককাকা আজ পাত্র দেখাতে আসবেন, তা চলমা পুরি, তাদের জলখাবার ঠিক করে রাখি গে। আনন্দে উৎসাহে মার সঙ্গে পুরবালা ভাণ্ডার অভিমুখে প্ৰস্থান করিল। মুখুজ্যোমশায়ের সঙ্গে শৈলর তখন গোপন কমিটি বসিল। এই শ্যালী-ভগিনীপতি দুটি পরস্পরের পরম বন্ধু ছিল। অক্ষয়ের মত এবং রুচির দ্বারাই শৈলের স্বভাবটা গঠিত। অক্ষয় তাহার এই শিষ্যাটিকে যেন আপনার প্রায় সমবয়স্ক ভাইটির মতো দেখিতেন- মেহের সহিত সৌহার্দ্য মিশ্রিত। তাহাকে শ্যালীর মতো ঠাট্টা করিতেন বটে, কিন্তু তাহার প্রতি বন্ধুর মতো একটি সহজ শ্রদ্ধা ছিল। শৈল কহিল, “আর তো দেরি করা যায় না মুখুজ্যোমশায়। এইবার তোমার সেই চিরকুমার-সভার বিপিনবাবু এবং শ্ৰীশবাবুকে বিশেষ একটু তাড়া না দিলে চলছে না। আহা, ছেলে দুটি চমৎকার। আমাদের নেপ আর নীরর সঙ্গে দিব্যি মানায়। তুমি তো চৈত্রমাস যেতে-না-যেতে আপিস ঘাড়ে করে সিমলে যাবে, এবারে মাকে ঠেকিয়ে রাখা শক্ত হবে।” অক্ষয় । কিন্তু তাই বলে সভাটিকে হঠাৎ অসময়ে তাড়া লাগালে যে চমকে যাবে। ডিমের খোলা ভেঙে ফেললেই কিছু পাখি বেরোয় না। যথোচিত তা দিতে হবে, তাতে সময় লাগে। শৈল একটুখানি চুপ করিয়া রহিল ; তার পরে হঠাৎ হাসিয়া বলিয়া উঠিল, “ বেশ তো, তা দেবার ভার। আমি নেব মুখুজ্যোমশায়।” অক্ষয়। আর একটু খোলসা করে বলতে হচ্ছে। শৈলী। ঐ তো দশ নম্বরে ওদের সভা ? আমাদের ছাদের উপর দিয়ে দেখন-হাসির বাড়ি পেরিয়ে ওখানে ঠিক যাওয়া যাবে। আমি পুরুষবেশে ওদের সভার সভ্য হব, তার পরে সভা কতদিন টেকে আমি দেখে নেব । কী আপসোস যে, তোমার দিদিকে বিয়ে করে সভ্য নাম একেবারে জন্মের মতো ঘুচিয়েছি, নইলে দলবলে আমি সুদ্ধ তো তোমার জালে জড়িয়ে চক্ষু বুজে মরে পড়ে থাকতুম। এমন সুখের ফাড়াও কাটে। সখী, তবে মনোযোগ দিয়ে শোনো (সিন্ধুভৈরবীতে গান )— ওগো হৃদয়-বনের শিকারি । মিছে তারে জালে ধরা যে তোমারি ভিখারি ; সহস্রাবার পায়ের কাছে আপনি যে জন মরে আছে, নয়নবাণের খোচা খেতে সে যে অনধিকারী।” শৈল কহিল, “ছি মুখুজ্যোমশায়, তুমি সেকেলে হয়ে যাচ্ছি। ঐ-সব নয়ন-বাণ-টানগুলোর এখন কি আর চলন আছে ? যুদ্ধবিদ্যার যে এখন অনেক বদল হয়ে গেছে।” ইতিমধ্যে দুই বোন নৃপবালা, নীরবালা- ষোড়শী এবং চতুর্দশী প্ৰবেশ করিল। নৃপ শান্ত স্নিগ্ধ ; নীরু তাহার বিপরীত, কৌতুকে এবং চাঞ্চল্যে সে সর্বদাই আন্দোলিত। বলো তো ?” নৃপবালা। মুখুজ্যোমশায়, আজ কি তোমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ আছে? জলখাবারের আয়োজন হচ্ছে কেন ?