পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট « ©ዓ নিরাকার উপাসনা চারি সহস্ৰ বৎসর পূর্বে ভারতে প্রশ্ন উঠিয়াছিল— অশব্দমম্পর্শমরূপমব্যয়ং তথারসং নিত্যমগন্ধবচ্চ যৎ— র্যাহাতে শব্দ নাই, স্পর্শ নাই, রূপ নাই, রস নাই, গন্ধ নাই, এমন যে নিত্য পরব্রহ্ম, তাহাকে আমরা শব্দ-স্পৰ্শ-রূপ-রস-গন্ধের মধ্যে থাকিয়া লাভ করিতে পারি কি না ? তপোবনের অরণ্যচ্ছায়াতলে সেদিন তাহার এক সুগম্ভীর উত্তর ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছিল— বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং, আমি সেই মহান পুরুষকে জানিয়াছি। র্তাহীকে পাওয়া যায় কি না এ প্রশ্নের ইহা অপেক্ষা সুস্পষ্ট এবং সরল উত্তর আর কী হইতে পারে যে, আমি তাহাকে পাইয়াছি। যিনি জানিতে চাহিয়াছিলেন তিনি র্তাহাকে জানিয়াছেন, যিনি পাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন তিনি র্তাহাকে পাইয়াছেন, ইহাই আমাদের আশার কথা। ইহার উপরে আর তর্ক নাই। তর্কের দ্বারা যদি কেহ প্রমাণ করিত যে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় তবে তর্কের দ্বারা তাহার খণ্ডন সম্ভব হইতে পারিত, কিন্তু অনেক সহস্ৰ বৎসর পূর্বে নির্জন ধ্যানাসন হইতে দণ্ডায়মান হইয়া ব্রহ্মবাদী মহর্ষি বিশ্বলোককে আহবানপূর্বক এই এক মহাসাক্ষ্য ঘোষণা করিয়াছেন যে— বেদাহমেতং পুরুষং মহাস্তং, আমি সেই মহান পুরুষকে জানিয়াছি। সেই সত্যবাণী আজিও সমস্ত দেশকালকে অতিক্রম করিয়া সমস্ত তর্কসংশয়কে অভিভূত করিয়া দিব্যধামবাসী অমৃতের পুত্ৰগণের নিকট উখিত হইতেছে। অদ্যকার ভারতবর্ষে আমাদের মধ্যেও মাঝে মাঝে এ তর্ক উঠিয়া থাকে যে, নিরাকার ব্রহ্মকে কি পাওয়া যাইতে পারে ? প্রাচীন ভারতের মহাসাক্ষ্যবাণী আজিও লয়প্রাপ্ত হয় নাই ; সেই প্রশান্ত তপোভূমি হইতে অমৃত আশ্বাসবাক্য আজিও আমাদের বিক্ষুব্ধ কর্মভূমিতে আসিয়া উপনীত হইতেছে— এই অনিত্য সংসারের রূঞ্চরস-গন্ধ-ব্যুহ ভেদ করিয়া স্বাধীন আত্মার সনাতন জয়শঙ্খধ্বনি বাজিয়া উঠিতেছে, ব্রহ্মবিদাপ্নোতি পরম্– ব্রহ্মবিং পরম পুরুষকে পাইয়া থাকেন– তবু আমরা প্রশ্ন তুলিয়াছি নিরাকার পরব্রহ্মকে কি পাওয়া যায়? অন্ত তেমন সবল গভীর কণ্ঠে, তেমন সরল সতেজ চিত্তে এমন সুস্পষ্ট উত্তর কে দিবে – বেদাহমেতং পুরুষং মহাস্তং, আমি সেই মহান পুরুষকে জানিয়াছি। আজ সেই প্রশ্নের উত্তরে কেবল সংশয়ধুলিসমাচ্ছন্ন তর্ক উঠিয়াছে— ইহা কি কখনও সম্ভব হয় ? নিরাকার পরব্রহ্মকে কি কখনও পাওয়া যাইতে পারে ?