পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eðR রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে কানে আসিয়া পীেহে। মনের সঙ্গে মনের আপিস, ইহুর সঙ্গে ইচ্ছার বোঝাপড়া, কত বঁকাচোরা বাধার ভিতর দিয়া দেওয়া এবং নেওয়া। সেইসব বাধায় ঠেকিতে ঠেকিতে জীবনের নির্বরধারা মুখরিত উচ্ছাসে হাসিকান্নায় ফেনাইয়া উঠিয়া নৃত্য করতে থাকে, পদে পদে আবর্ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া উঠে এবং তাহার গতিবিধির কোনো নিশ্চিত হিসাব পাওয়া যায় না। কড়ি ও কোমল” মানুষের জীবননিকেতনের সেই সম্মুখের রান্তাটায় দাড়াইয়া গান। সেই রহস্যসভার মধ্যে প্রবেশ করিয়া আসন পাইবার জন্য দরবার মরিতে চাহিনী আমি সুন্দর ভুবনে, মানুষের মাঝে আমি বঁচিবারে চাই। বিশ্বজীবনের কাছে ক্ষুদ্র-জীবনের এই আত্মনিবেদন। শ্ৰীযুক্ত আশুতােষ চৌধুরী দ্বিতীয়বার বিলাত যাইবার জন্য যখন যাত্ৰা করি।” তখন আশুরা’ সঙ্গে জাহাজে আমার প্রথম পরিচয় হয়। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. এ. পাস করিয়া কেমব্রিজে ডিগ্রি লইয়া ব্যারিস্টর হইতে চলিতেছেন। কলিকাতা হইতে মাদ্রাজ পর্যন্ত কেবল কয়টা দিন মাত্র আমরা জাহাজে একত্র ছিলাম। কিন্তু দেখা গেল, পরিচয়ের গভীরতা দিনসংখ্যার উপর নির্ভর করেন। একটি সহজ সহৃদয়তার দ্বারা অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি এমন করিয়া আমার চিত্ত অধিকার করিয়া লইলেন যে, পূর্বোর্তাহার সঙ্গে যে চেনাশোনা ছিল না। সেই ফাকটা এই কয়দিনের মধ্যেই যেন আগাগোড়া ভরিয়া গেল । আশু বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিলে তঁহার সঙ্গে আমাদের আমীয়সম্বন্ধ স্থাপিত হইল। তখনো ব্যারিস্টরি ব্যবসায়ের বৃহের ভিতরে ঢুকিয়া পড়িয়া লয়ের মধ্যে লীন হইবার সময় তাহার হয় নাই। মক্কেলের কুঞ্চিত থলিগুলি পূৰ্ণবিকশিত হইয়া তখনো স্বর্ণকোষ উন্মুক্ত করে নাই এবং সাহিত্যবনের মধুসঞ্চায়েই তিনি তখন উৎসাহী হইয়া ফিরিতেছিলেন।” তখন দেখিতাম, সাহিত্যের ভাবুকতা একেবারে র্তাহার প্রকৃতির মধ্যে পরিব্যাপ্ত হইয়া গিয়াছিল। তঁহার মনের ভিতরে যে-সাহিত্যের হাওয়া বহিত তাহার মধ্যে লাইব্রেরি-শেলফের মরক্কো-চামড়ার গন্ধ একেবারেই ছিল না। সেই হাওয়ায় সমুদ্রপরের অপরিচিত নিকুঞ্জের নানা ফুলের নিশ্বাস একত্র হইয়া মিলিত, তাহার সঙ্গে আলাপের যোগে আমরা যেন কোন একটি দূর বনের প্রান্তে বসন্তের দিনে চড়িভীতি করিতে যাইতাম । ফরাসি কাব্যসাহিত্যের রসে র্তাহার বিশেষ বিলাস ছিল। আমি তখন কড়ি ও কোমল-এর কবিতাগুলি লিখিতেছিলাম। আমার সেই সকল লেখায় তিনি ফরাসি কোনো কোনো কবির ভাবের মিল দেখিতে পাইতেন । র্তােহর মনে হইয়াছিল, মানবজীবনের বিচিত্র রাসলীলা কবির মনকে একান্ত করিয়া টানিতেছে, এই কথাটাই কড়ি ও কোমল-এর কবিতার ভিতর দিয়া নানাপ্রকারে প্রকাশ পাইতেছে। এই জীবনের মধ্যে প্রবেশ করিবার ও তাঁহাকে সকল দিক দিয়া গ্ৰহণ করিবার জন্য একটি অপরিতৃপ্ত আকাঙক্ষা এই কবিতাগুলির মূলকথা। " ». १४»»,°ाणैकां ২ দ্র'প্রাণ,কড়ি ও কোমল-এর প্রথম কবিতা, রবীন্দ্র রচনাবলী ২(সুলভ।। ৪) t झ १ 8y७, नाौिका ० ৪ স্যার আশুতোষ চৌধুরী (১৮৬০-১৯২৪) ৫ হেমেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রতিভা দেবীর সহিত বিবাহ হয়, শ্ৰাবণ ১২৯৩ [১৮৮৬] ৬ দ্র আশুতোষ চৌধুরী লিখিত প্ৰবন্ধ কাব্যজগৎ’, ‘কথার উপকথা- ভারতী ও বালক, ১২৯৩