পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RRN9 রবীন্দ্র-রচনাবলী রামচন্দ্র । খবর কী হে ? রামাই। পরম্পরায় শুনা গেল, সেনাপতি মশাইয়ের ঘরে চোর পড়েছিল । রামচন্দ্র । (চোখ টিপিয়া) তার পরে ? রমাই। নিবেদন করি মহারাজ ! (ফর্নান্ডিজ র্তার কোর্তার বোতাম খুলছেন ও দিচ্ছেন)। আজ দিন তিন-চার ধরে সেনাপতি মশাইয়ের ঘরে রাত্রে চোর আনাগোনা করছিল। সাহেবের ব্ৰাহ্মণী জানতে পেরে কর্তাকে অনেক ঠেলা ঠেলি করেন, কিন্তু কোনোমতেই কর্তার ঘুম ভাঙাতে পারেন নি । রামচন্দ্র । হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ । মন্ত্রী । হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ হােঃ ! সেনাপতি । হিঃ হিঃ হিঃ। রমাই। তার পর দিনের বেলায় গৃহিণীর নিগ্ৰহ আর সইতে না পেরে জোড় হস্তে বললেন, “দোহাই তোমার, আজ রাত্রে চোর ধরব ।” রাত্রি দুই দণ্ডের সময় গিন্নি বললেন, “ওগো চোর এসেছে।” কর্তা বললেন, “ঐ যাঃ, ঘরে যে আলো জ্বলছে !” চোরকে ডেকে বললেন, “আজ তুই বড়ো বেঁচে গেলি । ঘরে আলো আছে, আজ নিরাপদে পালাতে পারবি, কাল আসিস দেখি- অন্ধকারে কেমন না। ধরা পড়িস।” इाभष्य । श श श श । মন্ত্রী । হাে হাে হাে হাে হাে । সেনাপতি । হি । রামচন্দ্র। তার পরে ? রামাই । জানি না, কী কারণে চোরের যথেষ্ট ভয় হল না, তার পর-রাত্রেও ঘরে এল । গিন্নি বললেন, “সর্বনাশ হল, ওঠে।” কর্তা বললেন, “তুমি ওঠে-না।” গিন্নি বললেন, “আমি উঠে কী করব ?” কর্তা বললেন, “কেন, ঘরে একটা আলো জ্বালাও না, কিছু যে দেখতে পাচ্ছি না।” গিয়ি বিষম ক্রুদ্ধ ; কর্তা ততোধিক ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “দেখো দেখি। তোমার জন্যই তো যথাসর্বস্ব গেল। আলোটা জ্বালাও । বন্দুকটা আনাে।” ইতিমধ্যে চাের কাজকর্ম সেরে বললে, “মশাই, এক ছিলিম তামাক খাওয়াতে । পারেন ? বড়ো পরিশ্রম হয়েছে।” কর্তা বিষম ধমক দিয়ে বললেন, “রোস বেটা ! আমি তামাক সেজে দিচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে আসবি তো এই বন্দুকে তোর মাথা উড়িয়ে দেব।” তামাক খেয়ে চাের বললে, “মশাই, আলোটা যদি জ্বলেন তো বড়ো উপকার হয়। সিঁদকাটিটা পড়ে গেছে, খুঁজে পাচ্ছি। না ।” সেনাপতি বললেন, “বেটার ভয় হয়েছে। তফাতে থাক, কাছে আসিস নে ৷” বলে তাড়াতাড়ি আলো জ্বালিয়ে দিলেন । ধীরে সুস্থে জিনিসপত্র বেঁধে চোর তো চলে গেল। কর্তা গিন্নিকে বললেন, “বেটা বিষম ভয় পেয়েছে।” - রামচন্দ্র । রামাই, শুনেছ। আমি শ্বশুরালয়ে যাচ্ছি ? রমাই।।(মুখভঙ্গি করিয়া) অসােরং খলু সংসােরং সারং শ্বশুরমন্দিরং!(সকলের হাস্য) কথাটা মিথ্যা নয় মহারাজ ! (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া) শ্বশুরমন্দিরের সকলই সার- আহারটা, সমােদরটা- দুধের সরটি পাওয়া যায়, মাছের মুড়োটি পাওয়া যায়- সকলই সারিপদার্থ ! কেবল সর্বাপেক্ষা অসার ঐ রামচন্দ্র । (হাসিয়া) সে কী হে, তোমার অর্ধাঙ্গরামাই । (জোড়হন্তে ব্যাকুলভাবে) মহারাজ, তাকে অর্ধাঙ্গ বলবেন না । তিন জন্ম তপস্যা করলে আমি বরঞ্চ একদিন তার অর্ধাঙ্গ হতে পারব এমন ভরসা আছে। আমার মতন পাচটা অর্ধাঙ্গ জুড়লেও उान आग्रठन कूलाम ना । যথাক্রমে সকলের হাস্য রামচন্দ্র। আমি তো শুনেছি, তােমার ব্ৰাহ্মণী বড়োই শান্তস্বভাবা, ঘরকন্নায় বিশেষ পটু। রামাই। সে কথায় কাজ কী ! ঘরে আর সকল রকমই জঞ্জাল আছে, কেবল আমি তিষ্ঠতে পারি