পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুচনা বাল্মীকি-প্রতিভায় একটি নাট্য-কথাকে গানের সূত্র দিয়ে গাথা হয়েছিল, মায়ার খেলায় গানগুলিকে গাথা হয়েছিল নাট্যসূত্রে । একটা সময় এসেছিল যখন আমার গীতিকাব্যিক মনোবৃত্তির ফঁাকের মধ্যে মধ্যে নাট্যের উকিঝু কি চলছিল। তখন সংসারের দেউড়ি পার হয়ে সবে ভিতর-মহলে পা দিয়েছি ; মানুষে মানুষে সম্বন্ধের জাল-বুনোনিটাই তখন বিশেষ করে ঔৎসুক্যের বিষয় হয়ে উঠেছিল । বাল্মীকি-প্রতিভাতে দস্থ্যর নির্মমতাকে ভেদ করে উচ্ছসিত হল তার অন্তগুঢ় করুণা। এইটেই ছিল তার স্বাভাবিক মানবত্ব, যেটা ঢাকা পড়েছিল অভ্যাসের কঠোরতায় । একদিন দ্বন্দ্ব ঘটল, ভিতরকার মানুষ হঠাৎ এল বাইরে । প্রকৃতির প্রতিশোধেও এই দ্বন্দ্ব । সন্ন্যাসীর মধ্যে চিরকালের যে মানুষ প্রচ্ছন্ন ছিল তার বাধন ছিড়ল । কবির মনের মধ্যে বাজছিল মানুষের জয়গান। মায়ার খেলায় গানের ভিতর দিয়ে অল্প যে একটুখানি নাট্য দেখা দিচ্ছে সে হচ্ছে এই যে, প্রমদা আপনার স্বভাবকেই জানতে পারে নি অহংকারে, অবশেষে ভিতর থেকে বাজল বেদনা, ভাঙল মিথ্যে অহংকার, প্রকাশ পেল সত্যকার নারী । মায়াকুমারীদের কাছ থেকে এই ভৎসনা কানে এল : এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু মুখ চলে যায়, এমনি মায়ার ছলনা ।