পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>lao রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন অবস্থায় সাহিত্যের হাওয়াবদল হয় এবেল ও-বেলা । কোথাও আপুন দরদ রেখে যায় না । পিছনটাকে লাথি মেরেই চলে, যাকে উচু করে গড়েছিল তাকে ধূলিসাৎ করে তার পরে অট্টহাসি। আমাদের মেয়েদের পাড়ওআলা শাড়ি, তাদের নীলাম্বরী, তাদের বেনারসি চেলি মোটের উপর দীর্ঘকাল বদল হয়নি—কেননা ওরা আমাদের অন্তরের অনুরাগকে অঁাকড়ে আছে। দেখে আমাদের চোখের ক্লান্তি হয় না। হত ক্লাস্তি, মনটা যদি রসিয়ে দেখবার উপযুক্ত সময় না পেয়ে বে-দরদি ও অশ্রদ্ধাপরায়ণ হয়ে উঠত। হৃদয়হীন অগভীর বিলাসের আয়োজনে অকারণে অনায়াসে ঘন ঘন ফ্যাশনের বদল । এখনকার সাহিত্যে তেমনি রীতির বদল । হৃদয়টা দৌড়তে দৌড়তে প্রীতিসম্বন্ধের রাখি গাঁথতে ও পরাতে পারে না। যদি সময় পেত সুন্দর করে বিনিয়ে বিনিয়ে গাথত। এখন ওকে ব্যস্ত লোকেরা ধমক দিয়ে বলে, রেখে দাও তোমাদের সুন্দর । সুন্দর পুরোনো, সুন্দর সেকেলে । আনো একটা যেমন-তেমন করে পাক-দেওয়া শণের দড়ি— সেটাকে বলব রিয়ালিজম । এখনকার দাড় দৌড়ওআলা লোকের ওইটেই পছন্দ। স্বল্পায়ু ফ্যাশন হঠাৎ-নবাবের মতো উদ্ধত—তার প্রধান অহংকার এই যে, সে অধুনাতন, অর্থাৎ তার বড়াই গুণ নিয়ে নয়, কাল নিয়ে । বেগের এই মোটর-কলটা পশ্চিমদেশের মর্মস্থানে। ওটা এখনও পাক দলিলে আমাদের নিজস্ব হয়নি। তবু আমাদেরও দৌড় আরম্ভ হল । ওদেরই হাওয়া-গাড়ির পায়দানের উপর লাফ দিয়ে আমরা উঠে পড়েছি । আমরাও খর্বকেশিনী খর্ববেশিনী সাহিত্যকীর্তির টেকনিকের হাল ফ্যাশন নিয়ে গম্ভীরভাবে আলোচনা করি, আমরাও অধুনাতনের স্পধা নিয়ে পুরাতনের মানহানি করতে অত্যন্ত খুশি হই । এই সব চিন্তা করেই বলেছিলুম আমার এ-বয়সে খ্যাতিকে আমি বিশ্বাস করিনে। এই মায়ামৃগীর শিকারে বনে-বাদাড়ে ছুটে বেড়ানো যৌবনেই সাজে। কেননা সে-বয়সে মৃগ যদি বা নাও মেলে মৃগয়াটাই যথেষ্ট। ফুল থেকে ফল হতেও পারে, না হতেও পারে, তবু আপৃন