পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- বউ-ঠাকুরানীর হাট 8S\ס শাস্তি সম্ভব তাহার বিধান করিতেছিলেন। মাঝে মাঝে এক বার চৈতন্ত হইতেছে যে, শাস্তি দিবার বুঝি আর অবসর থাকিবে না। * উদয়াদিত্য তরবারি হস্তে অস্তঃপুর অতিক্রম করিয়া রুদ্ধ দ্বারে গিয়া সবলে পদাঘাত করিলেন– কছিলেন, “কে আছিল ?” . বাহির হইতে উত্তর আসিল, “আজ্ঞা, আমি সীতারাম।” যুবরাজ দৃঢ়স্বরে কছিলেন, “শীঘ্র দ্বার খোলো।” সে অবিলম্বে দ্বার খুলিয়া দিল । উদয়াদিত্য চলিয়া যাইবার উপক্রম করিলে সে জোড়হস্তে কহিল, “যুবরাজ মাপ করুন, আজ রাত্রে অন্তঃপুর হইতে কাহারও বাহির হইবার হুকুম নাই ।” যুবরাজ কছিলেন, “সীতারাম, তবে কি তুমিও আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিবে ? আচ্ছা তবে এস।” বলিয়া আসি নিষ্কাশিত করিলেন । সীতারাম জোড়হস্তে কহিল, “না যুবরাজ, আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করিতে পারিব না, আপনি দুইবার আমার প্রাণ রক্ষা করিয়াছেন।” বলিয়া তাহার পায়ের ধুলা মাথায় তুলিয়া লইল । যুবরাজ কহিলেন, “তবে কী করিতে চাও শীঘ্র করো, আর সময় নাই ।” সীতারাম কহিল, “যে প্রাণ আপনি দুইবার রক্ষা করিয়াছেন, এবার তাহাকে বিনাশ করিবেন না। আমাকে নিরস্ত্র করুন। এই লউন আমার অস্ত্র । অামাকে আপাদমস্তক বন্ধন করুন। নহিলে মহারাজের নিকট কাল আমার রক্ষা নাই ।” যুবরাজ তাহার অস্ত্ৰ লইলেন, তাহার কাপড় দিয়া তাহাকে বধিয়া ফেলিলেন। সে সেইখানে পড়িয়া রছিল, তিনি চলিয়া গেলেন। কিছুদূর গিয়া একটা অনতিউচ্চ প্রাচীরের মতো আছে। সে প্রাচীরের একটিমাত্র দ্বার, সে দ্বারও রুদ্ধ। সেই দ্বার অতিক্রম করিলেই একেবারে অস্তঃপুরের বাহিরে যাওয়া যায়। যুবরাজ দ্বারে আঘাত না করিয়া একেবারে প্রাচীরের উপর লাফ দিয়া উঠিলেন। দেখিলেন, এক জন প্রহরী প্রাচীরে ঠেলান দিয়া দিব্য আরামে নিদ্র। যাইতেছে। অতি সাবধানে তিনি নামিয়া পড়িলেন। বিদ্যুদ্বেগে সে নিদ্রিত প্রহরীর উপর গিয়া পড়িলেন। তাহার অস্ত্র কড়িয়া দুরে ফেলিয়া দিলেন ও সেই হতবুদ্ধি অভিভূত প্রহরীকে আপাদমস্তক বাধিয়া ফেলিলেন । তাহার কাছে চাবি ছিল, সেই চাবি কাড়িয়া লইয়া দ্বার খুলিলেন। তখন প্রহরীর চৈতন্ত হইল, বিস্মিত স্বরে কহিল, “যুবরাজ, করেন কী ?” যুবরাজ কহিলেন, “অন্তঃপুরের দ্বার খুলিতেছি।”