পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Φί, বউ-ঠাকুরানীর হাট । - 8&సి মঙ্গলা মনে মনে হালিয়া কহিল, “তোমার আত তাড়াতাড়ি করিবার আবশ্বক কী ? যখন সুবিধা হয় শোধ দিলেই হইবে । তোমার হাতে দিতেছি, এ তো আর জলে ফেলিয়া দিতেছি না।” জলে ফেলিয়া দিলেও বরঞ্চ পাইবার সম্ভাবন আছে, সীতারামের হাতে দিলে সে সম্ভাবনাটুকুও নাই, এই প্রভেদ। মঙ্গলার এইরূপ অমুরাগের লক্ষণ দেখিয়া সীতারামের ভালোবাসা একেবারে উথলিয়| উঠিল। সীতারাম রসিকতা করিবার উদ্যোগ করিল। বিন! টাকায় নবাবি করা ও বিনা হাস্যরসে রসিকতা করা সীতারামের স্বভাবসিদ্ধ । সে যাহা মুখে আসে তাছাই বলে ও আর কাহারও অপেক্ষ না করিয়া নিজেই হাসিতে থাকে। তাহার হাসি দেখিয়া হাসি পায়। সে যখন রাজবাড়ির প্রহরী ছিল, তখন অন্তান্ত প্রহরীদের সহিত সীতারামের প্রায় মাঝে মাঝে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিবার উদ্যোগ হইত, তাহার প্রধান কারণ, সীতারাম যাহাকে মজা মনে করিত আর-সকলে তাহাকে মজা মনে করিত না। হনুমানপ্রসাদ তেওয়ারি পাহারা দিতে দিতে ঢুলিতেছিল, সীতারাম আস্তে আস্তে তাহার পশ্চাতে গিয়া হঠাৎ পিঠে এমন এক কিল মারিল যে, সেই হাড়ভাঙা রসিকতার জালায় তাহার পিঠ ও পিত্ত একসঙ্গে জলিয়া উঠিল। সীতারাম উচ্চৈঃস্বরে হাসিতে লাগিল, কিন্তু হনুমানপ্রসাদ সে হাসিতে যোগ ন/দিয়া কিলের সহিত হাস্তরসের প্রভেদ ও করুণ রসের সম্বন্ধ উদাহরণ স্বারা সীতারামকে অতিশয় স্পষ্ট করিরা বুঝাইয়া দিয়াছিল। সীতারামের রসিকতার এমন আরো শত শত গল্প এইখানে উদ্ধৃত করা যাইতে পারে । পূর্বেই বলা হইয়াছে সীতারামের অনুরাগ সহসা উথলিয়া উঠিল, সে রুক্মিণীর কাছে ঘেষিয়া প্রতিভরে কছিল, “তুমি আমার স্বভদ্রা, আমি তোমার জগন্নাথ !” রুক্মিণী কহিল, “মর মিনসে । সুভদ্রা যে জগন্নাথের বোন ।” সীতারাম কহিল, “তাহা কেমন করিয়া হইবে ? তাহা হইলে মুভদ্রাহরণ হইল কী করিয়া ।” E-4 রুক্মিণী হাসিতে লাগিল, সীতারাম বুক ফুলাইয়া কহিল, “না, তা হইবে না, হাসিলে হইবে না, জবাব দাও। সুভদ্র। যদি বোনই হইল তবে সুভদ্রাহরণ হইল কী করিয়া ।” সীতারামের বিশ্বাস যে, সে এমন প্রবল যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছে যে, ইহার উপরে আর কথা কহিবার জো নাই । রুক্মিণী অতি মিষ্টস্বরে কছিল, “দুর মূখ।” সীতারাম গলিয়া গিয়া কছিল, “মুর্থই তো বটে, তোমার কাছে আমি তো ভাই ●之