পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و a 8 উষার আলোক লইয়া তরুণী উষার হাত ধরিয়া কারার মধ্যে প্রবেশ করে, যখন সেই মেহের ধন সুকুমার মুখখানি লইয়া কাছে আসিয়া বলে, কত যত্ন কত অাদরের দৃষ্টিতে র্তাহার মুখের দিকে একবার চাহিয়া দেখে, কত মিষ্ট স্বরে কত কথা জিজ্ঞাসা করে, তখন তিনি আর কোনোমতেই প্রাণ ধরিয়া বলিতে পারেন না, “বিভা, তুই যা, তুই আর আসিল না, তোকে আর দেখিব না।” প্রত্যহ মনে করেন, কাল বলিব । কিন্তু সে কাল আর কিছুতেই আসিতে চায় না। অবশেষে একদিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিলেন । বিভা আসিল, বিভাকে বলিলেন, “বিভা, তুই আর এখানে থাকিস নে । তুই না গেলে আমি কিছুতেই শাস্তি পাইতেছি না। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় এই কারাগৃহের অন্ধকারে কে আসিয়া আমাকে যেন বলে, বিভার বিপদ কাছে আলিতেছে। বিভা, আমার কাছ হইতে তোরা শীঘ্ৰ পালাইয়া যা। আমি শনিগ্ৰহ, আমার দেখা পাইলেই চারিদিক হইতে দেশের বিপদ ছুটিয়া আসে। তুই শ্বশুরবাড়ি যা। মাঝে মাঝে যদি সংবাদ পাষ্ট, তাহা হইলেই আমি মুখে থাকিব ।” বিভা চুপ করিরা রহিল। উদয়াদিত্য মুখ নত করিয়া বিভার সেই মুখখানি অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে লাগিলেন। তাছার দুই চক্ষু দিয়া ঝর ঝর করিয়া অশ্রু পড়িতে লাগিল। উদয়াদিত্য বুঝিলেন, “আমি কারাগার হইতে না মুক্ত হইলে বিভা কিছুতেই আমাকে ছাড়িয়া যাইবে না, কী করিয়া মুক্ত হইতে পারিব।” ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ রামচন্দ্র রায় ভাবিলেন, বিভা যে চন্দ্রদ্বীপে আসিল না, সে কেবল প্রতাপাদিত্যের শাসনে ও উদয়াদিত্যের মন্ত্রণায় । বিভা যে নিজের ইচ্ছায় আসিল না, তাহা মনে করিলে তাহার আত্মগৌরবে অত্যস্ত আঘাত লাগে । তিনি ভাবিলেন প্রতাপাদিত্য আমাকে অপমান করিতে চাহে, অতএব সে কখনো বিভাকে আমার কাছে পাঠাইবে না । কিন্তু এ অপমান আমিই তাহাকে ফিরাইয়া দিই না কেন । আমিই তাহাকে এক পত্র লিখি না কেন যে তোমার মেয়েকে আমি পরিত্যাগ করিলাম, তাহাকে যেন আর চন্দ্রদ্বীপে পাঠানো না হয়। এইরূপ সাত-পাচ ভাবিয়া পাচজনের সহিত মন্ত্রণা করিয়া প্রতাপাদিত্যকে ওই মর্মে এক পত্র লেখা হইল। প্রতাপাদিত্যকে এরূপ চিঠি লেখা বড়ো সাধারণ সাহসের কর্ম নহে। রামচন্ত্র