পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ee" রবীন্দ্র-রচনাবলী বিষয় নিয়ে ছেলেমানুষের মতো খুতখুত করতে থাকেন । একজন ইঙ্গবঙ্গ নালিশ করছিলেন যে, আমাদের দেশের মেয়ের পিয়ানো বাজাতে পারে না, ও এখানকার মতো ভিজিটারদের সঙ্গে দেখা করতে ও ভিজিট প্রতাপণ করতে যায় না। এই রকম ক্রমাগত প্রতি ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে এ-দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের তুলনা করে করে তাদের চটাভাব চটনমান ষন্ত্রে ব্লাড হীট ছাড়িয়ে ওঠে। একজন ইঙ্গবঙ্গ র্তার সমবেদক বন্ধুদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে বলছিলেন যে, যখন তিনি মনে করেন যে, দেশে ফিরে গেলে তাকে চারি দিকে ঘিরে মেয়েগুলো প্যান প্যান করে র্কাদতে আরম্ভ করবে, তখন আর তার দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না । অর্থাৎ তিনি চান যে, তাকে দেখবামাত্রই ডিয়ার ডার্লিং বলে ছুটে এসে তার স্ত্রী তাকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করে তার কাধে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে থাকবে । ডিনারের টেবিলে কাটা ছুরি উলটে ধরতে হবে, কি পালটে ধরতে হবে তাই জানবার জন্যে তাদের গবেষণা দেখলে র্তাদের উপর ভক্তির উদয় হয় । কোটের কোন ছাটটা ফ্যাশন-সংগত, আজকাল নোবিলিটি আঁটি প্যাণ্টলুন পরেন কি ঢলকো পরেন, ওয়ালটুস নাচেন কি পোলক মজুর্ক, মাছের পর মাংস খান কি মাংসের পর মাছ, সে-বিষয়ে তারা অভ্রান্ত খবর রাখেন। ওইরকম ছোটোখাটো বিষয়ে এক জন বাঙালি যত দস্তুর-বেদস্তুর নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, এমন এ-দিশি করে না । তুমি যদি মাছ খাবার সময় ছুরি ব্যবহার কর তবে এক জন ইংরেজ তাতে বড়ো আশ্চর্য হবেন না, কেননা তিনি জানেন তুমি বিদেশী, কিন্তু একজন ইঙ্গবঙ্গ সেখানে উপস্থিত থাকলে তার স্মেলিং সলটের আবখ্যক করবে । তুমি যদি শেরি খাবার গ্লাসে তাম্পেন খাও তবে একজন ইঙ্গবঙ্গ তোমার দিকে ই করে চেয়ে থাকবেন, যেন তোমার এই অজ্ঞতার জন্যে সমস্ত পৃথিবীর মুখ শাস্তি নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। সন্ধ্যেবেলায় তুমি যদি মনিং কোট পর, তা হলে তিনি ম্যাজিস্টেট হলে জেলে নির্জনবাসের আজ্ঞা দিতেন। এক জন বিলেত-ফেরত কাউকে মটন দিয়ে রাই দিয়ে খেতে দেখলে বলতেন, “তবে কেন মাথা দিয়ে চল না ?” আর একটি আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখেছি যে, বাঙালিরা ইংরেজদের কাছে স্বদেশের লোকেদের ও আচারব্যবহারের যত নিন্দে করেন, এমন এক জন ভারতদ্বেষী অ্যাংগ্লো ইণ্ডিয়ানও করেন না । তিনি নিজে ইচ্ছা করে কথা পাড়েন ও ভারতবর্ষের নানাপ্রকার কুসংস্কার প্রভৃতি নিয়ে প্রাণ খুলে হাস্যপরিহাস করেন। তিনি গল্প করেন যে, আমাদের দেশে বল্লভাচার্ষের দল বলে একরকম বৈষ্ণবের দল আছে । তাদের সমস্ত অনুষ্ঠান সবিস্তারে বর্ণনা করতে থাকেন। সভার লোকদের হাসাবার