পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-প্রবাসীর পত্র । G يم واټa হয়েছেন । দিনটা অন্ধকার, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, আর র্যাদের র্যাদের আসবার কথা ছিল, তারা সকলে আসেন নি। আমার নিজের এ পার্টিতে যোগ দিবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু ম— মহাশয় নাছোড়বান্দা। আমরা অনেক ভারতবর্ষীয় একত্র হয়েছিলুম, বোধ হয় ম— মহাশয় সকলকেই সুন্দরীর লোভ দেখিয়েছিলেন, কেন না সকলেই প্রায় বাহারে সাজগোজ করে গিয়েছিলেন । অনেকেই গলায় লাল ফাসি বেঁধেছিলেন । ম— মহাশয় স্বয়ং র্তার নেকটাইয়ে একটি তলবারের আকারে পিন গু জে এসেছিলেন । আমাদের মধ্যে এক জন তাকে ঠাট্টা করে জিজ্ঞাসা করলেন “দেশের সমস্ত টাইয়ে যে তলবারের আঘাত করা হয়েছে, ওটা কি তার বাহ লক্ষণ ?” তিনি হেসে বললেন, “তা নয় গো, বুকের কাছে একটা কটাক্ষের ছুরি বিধেছে, ওটা তারই চিহ্ন ।” দেশে থাকতে বিধেছিল, কি এখানে, তা কিছু বললেন না। ম— মহাশয়ের হাসিতামাশার বিরাম নেই ; সেদিন তিনি স্ট্রীমারে সমস্ত লোকের সঙ্গে সমস্ত দিন ঠাট্টা ও গল্প করে কাটিয়েছিলেন । এক বার তিনি মহিলাদের হাত দেখে গুনতে আরম্ভ করলেন। তখন তিনি বোটমৃদ্ধ মেয়েদের এত প্রচুর পরিমাণে হাসিয়েছিলেন যে, সত্যি কথা বলতে কি, তার উপর আমার মনে মনে একটুখানি ঈর্ষার উদ্রেক হয়েছিল। যথাসময়ে বোট ছেড়ে দিল । নদী এত ছোটো ষে, আমাদের দেশের খালের কাছাকাছি পৌছয়। স্টীমারের মধ্যে আমাদের আলাপপরিচয় গল্পসল্প চলতে লাগল। এক জন ইংরেজের সঙ্গে আমাদের এক জন দিশি লোকের ধর্মসম্বন্ধীয় তর্ক উঠল । আমাদের সঙ্গে এক জনের আলাপ হল, তিনি র্তাদের ইংরেজি সাহিত্যের কথা তুললেন, তার শেলির কবিতা অত্যন্ত ভালো লাগে ; সে-বিষয়ে আমার সঙ্গে তার মতের মিল হল দেখে তিনি ভারি খুশি হলেন ; তিনি আমাকে বিশেষ করে তার বাড়ি যেতে অনুরোধ করলেন । ইনি ইংরেজি সাহিত্য ও তার নিজের দেশের রাজনীতি ভালোরকম করে চর্চা করেছেন, কিন্তু যেই ভারতবর্ষের কথা উঠল, আমনি তার অজ্ঞতা বেরিয়ে পড়ল । তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কোন রাজার অধীনে।” আমি অবাক হয়ে বললুম, “ব্রিটিশ গবর্মেন্টের।” তিনি বললেন, “তা আমি জানি, কিন্তু আমি বলছি, কোন ভারতবর্ষীয় রাজার অব্যবহিত অধীনে।” কলকাতার বিষয়ে এর জ্ঞান এই রকম । তিনি অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “আমার অজ্ঞতা মাপ করবেন, ভারতবর্ষের বিষয়ে আমাদের ঢের জানা উচিত ছিল, কিন্তু লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি আমি এ-বিষয়ে খুব কম জানি।” এইরকম বোটের ছাতের উপর আমাদের কথাবার্তা চলতে লাগল ; অামাদের মাথার উপরে একটা কানাতের আচ্ছাদন। মাঝে মাঝে টিপ টপ করে