পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় 嘯 8ፃፃ সবচেয়ে বাহা দেখিয়া হৃদয় জুড়াইয়া যায় তাহা এখানকার নরনারীর মেলা । নারীবজিত কলিকাতার দৈন্তটা যে কতখানি তাহা এখানে আলিলেই দেখা যায়। কলিকাতায় আমরা মানুষকে আধখানা করিয়া দেখি, এইজন্ত তাহার আনন্দরূপ দেখি মা। নিশ্চয়ই সেই না-দেখার একটা দণ্ড আছে । নিশ্চয়ই তাহা মাছুষের মনকে সংকীর্ণ করিতেছে, তাহার স্বাভাবিক বিকাশ হইতে বঞ্চিত করিতেছে। অপরাহ্লে দ্বীপুরুষ ও শিশুরা সমূত্রের ধারে একই আনন্দে মিলিত হইয়াছে, সত্যের এই একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শোভা না দেখিতে পাওয়ার মতো ভাগ্যহীনতা মানুষের পক্ষে আর-কিছুই হইতে পারে না। যে দুঃখ আমাদের অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে তাহা আমাদিগকে অচেতন করিয়া রাখে, কিন্তু তাহার ক্ষতি প্রত্যহুই জমা হইতে থাকে তাছাতে কোনো সন্দেহ নাই । ঘরের কোণের মধ্যে আমরা নরনারী মিলিয়া থাকি, কিন্তু সে মিলন কি সম্পূর্ণ। বাহিরে মিলিবার ষে উদার বিশ্ব রহিয়াছে সেখানে কি সরল আনন্দে একদিনও আমাদের পরম্পর দেখাসাক্ষাৎ হইবে না । আমাদের গাড়ি ম্যাথেরান পাহাড়ের উপরে একটা বাগানের সম্মুখে আসিয়া জাড়াইল । ছোটো বাগানটিকে বেষ্টন করিয়া চারি দিকে বেঞ্চ পাতা। সেখানেও দেখি কুলস্ত্রীরা আত্মীয়দের সঙ্গে বসিয়া বায়ুসেবন করিতেছেন। কেবল পার্সি রমণী নহে, কপালে-সিদ্ধরের-ফোটা-পরা মারাঠি মেয়েরাও বসিয়া আছেন— মুখে কেমন প্রশান্ত প্রসন্নতা। নিজের অস্তিত্বটা যে একটা বিষম বিপদ, সেটাকে চারি দিকের দৃষ্টি হইতে কেমন করিয়া ঠেকাইয়া রাখা যায়, এ ভাবনা লেশমাত্র তাছাদের মনে নাই। মনে মনে ভাবিলাম, সমস্ত দেশের মাথার উপর হইতে কত বড়ো একটা সংকোচের বোঝা নামিয়া গিয়াছে এবং তাহাতে এখানকার জীবনযাত্রা আমাদের চেয়ে কত দিকে সহজ ও সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে। পৃথিবীর মুক্ত বায়ু ও আলোকে সঞ্চরণ করিবার সহজ অধিকারটি লোপ করিয়া দিলে মাছুষ নিজেই নিজের পক্ষে কিরূপ একটা অস্বাভাবিক বিয় হইয়া উঠে, তাহা আমাদের দেশের মেয়েদের সর্বদা সলংকোচ অসহায়তা দেখিলে বুঝিতে পারা যায়। রেলোয়ে স্টেশনে আমাদের মেয়েদের দেখিলে, তাছাদের প্রতি সমস্ত দেশের বহুকালের নিষ্ঠুরতা স্পষ্ট প্রত্যক্ষ হইয়া উঠে। ম্যাথেরানের এই বাগানে ঘুরিতে ঘুরিতে আমাদের বীডন-পার্ক, ও গোলদিঘিকে মনে করিয়া দেখিলাম— তাহার সে কী লক্ষ্মীছাড়া কৃপণতা । প্রজাপতির দল যখন ফুলের বনে মধু খুজিয়া ফেরে তখন তাহারা যে বাবুঘানা করিয়া বেড়ায় তাহা নহে, বন্ধত তখন তাহার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু তাই বলিয়া তাহারা