পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 obr রামুেক্সম্বন্দর রচনাসমগ্র অকুতোভয়ে দৃষ্টিপাত করিতে পারি। আরও আহলাদের বিষয় এই যে, সেই সনাতন ধৰ্ম্মের প্রকোষ্ঠ হইতে সাহিত্যকে নির্বাসিত কবিয়া,—সাহিত্যকে ধৰ্ম্ম হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়! দেখিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই । অন্য দেশে ধন্মের পারিভাষিক সংজ্ঞ স্বাহাই হউক, আমাদের এই ভারতবর্ষে ধর্মের সংজ্ঞা আয়ত ও প্রশস্ত। যাহা ধরিয়া আছে, তাহাই ধৰ্ম্ম ; যাহা মানবের ব্যক্তিগত জীবনকে ধরিয়া আছে, যাহা মানবের সামাজিক জীবনকে ধরিয়া আছে ও আরও উদ্ধে উঠিয়া যাহা বিশ্বব্রহ্মা গুকে ধরিয়া আছে, আমাদের শাস্ত্রের নির্দেশক্রমে তাহারই নাম ধৰ্ম্ম। সাহিত্য তাহার অঙ্গীভূত । ধৰ্ম্মরূপ সনাতন অশ্বখের মূল রহিয়াছে উদ্ধে দেবলোকে ; ইহার শাখাপ্রশাখা অবাসুখে প্রসারিত হইয়া মানব-সমাজে কৰ্ম্মরূপ ফুল-ফলে ও পত্রপল্লবে স্মৃত্তি পাইতেছে। মানব-জীবনের যাহাতে স্মৃতি, ধৰ্ম্মেব তথায় অধিকার , সাহিত্যে মানব-জীবনের স্কৃতি, অতএব সাহিত্য ধর্মের অধিকারবহির্ভূত নহে। লোকস্থিতি ধৰ্ম্মেব অভিপ্রায়-সাহিত্য লোকস্থিতির সহায় – অতএব সাহিত্যকে ধৰ্ম্ম হইতে বিছিন্ন করিয়| দেখিবার প্রয়োজন নাই। মানুষের সহিত মানুষের অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ স্থাপন করিয়া, অতীতের সহিত ভবিষ্যতেব সম্বন্ধ স্থাপন করিয়া, মানুষকে মানুষের সহিত করিয়া, ভবিষ্যৎকে অতীতের সহিত করিয়া লোকস্থিতির আয়কৃল্য করাই সাহিত্যেব এক মাত্র ব্যবসায় । অতএব সাহিত্যকে ধৰ্ম্মের সহিত বিচ্ছিন্ন করিবার প্রয়োজন নাই। যে চতুষ্টয়ী বাণী বিশ্ববিধাতার চতুর্মুখ হইতে সমীরিত হইয়া আমাদের পূৰ্ব্বপিতামহ মহর্ষিগণের দৃষ্টিপথে প্রত্যক্ষ হইয়াছিল ও তাহাদের শ্রীতিপ্রবিষ্ট হইয়াছিল, তাহাই ধৰ্ম্মসংস্থাপনের জন্য ভারতসমাজে আদর্শ সাহিত্যরূপে গৃহীত হইয়াছে , আমাদের ব্যবহারিক জীবনের ব্যবহার সম্পাদনার্থ যে কিছু লৌকিক সাহিত্য বর্তমান আছে বা ভবিষ্যতে আবিভূত হইবে, তাহ৷ সেই অপৌরুষেয় বাণীর স্মৃতি ও অনুস্মৃতি ও প্রতিধ্বনি বলিয়া আমরা ভারতবাসী যুগ ব্যাপিয়া গ্রহণ করিয়া আসিতেছি, পুরাতনী বাশ্বাদিনীর বীণার তন্ত্রীতে তাহাই বিবিধ মূর্ছনায় যুগ ব্যাপিয়৷ ঝঙ্কত হইয়া আসিতেছে, তাহার করষ্কৃত-পুস্তক-মধ্যে তাহাই মসীলেখে অঙ্কিত ও নিবদ্ধ রহিয়াছে। প্রলয়কালে মহাবরাহের দ্ৰংষ্ট্রার উপর যখন বস্থদ্ধর অবস্থান করেন, ধৰ্ম্ম তখন মূৰ্ত্তিমান হইয়া সেই সনাতন সাহিত্যকে উদ্ধার করিয়া রক্ষা করেন । এই পুরাতন সমাজতরণী যখন স্বদেশের অজ্ঞানে ও বিদেশের অনাচারে বিপ্লুত হইবার উপক্রম হইয়াছিল, তখন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর লোকস্থিতির আহুকুল্যের জন্য সেই প্রাচীন সাহিত্যের আশ্রয় লইয়াছিলেন ; সেই পুরাতনী বাণীর বৈদেশিক বিকৃত প্রতিধ্বনিতে কর্ণপাত করা আবশ্যক বোধ করেন নাই। যাহার নাম ধৰ্ম্ম, তাহাই স্বভাব এবং স্বভাবের মামান্তর স্বাস্থ্য। স্বভাবের অতিক্রমের নাম ব্যাধি, এবং আমার বিবেচনায় আমাদের বর্তমান অবস্থায় বিদেশের প্রবল আক্রমণে আমাদিগকে যে অস্বাভাবিকতায় উপনীত করিয়াছে, তাহাই আমাদের এক মাত্র ব্যাধি। এই অস্বাভাবিকতারূপ মহাব্যাধি আমাদিগের পক্ষে নানা উৎকট লক্ষণে প্রকাশ পাইতেছে । আমরা বৈদেশিকের পরিচ্ছদে অঙ্গ আবরণ করিতে জজ বোধ করি না, আমরা স্বদেশীকে বিদেশীর ভাষায় বিকৃত উচ্চারণে আহ্বান করিতে লজ্জিত হই না । এই সকল অস্বাভাবিক আচরণ আমাদিগকে সর্বস্তু