পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9టిy রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র ইচ্ছা কর, তাহা হইলে তুমি ঘোর মূখ। তোমার এ স্থলে কৰ্ত্তব্য কি ? কৰ্ত্তব্য যথেষ্ট আছে। তুমি যদি বেত্ৰহস্তে তাহার গতিরোধ করিয়া দণ্ডায়মান হও ও মুক্ত জগতের সহিত তাহার সাক্ষাৎ করা নিষেধ করিয়া তোমার কাল্পনিক জগতের একটা মিথ্যা ছবি কেবল তোমার বাক্যের উপাদানে নিৰ্ম্মাণ করিয়৷ বাক্যালঙ্কারে সংযত করিয়া, তাহার নিকট উপস্থিত করিয়া তাহাকে বঞ্চিত করিতে চেষ্টা কর, তাহা হইলে বুঝিব, তোমার কৰ্ত্তব্যবোধ হয় নাই। তুমি তাহাকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করিতে দাও ; নিত্য নূতন সামগ্ৰী আহরণ করিয়া তাহার ইন্দ্রিয়পঞ্চকের সম্মুখে স্থাপিত কর, তুমি তাহার হইয়া দেখিও না বা দেখাইয়া দিও না, সে স্বয়ং চেষ্টা করিয়া দেখিতে থাকুক। তাহার প্রত্যেক ইঞ্জিয়, প্রত্যেক স্নায়ু, প্রত্যেক পেশী জাগতিক বিবিধ পদার্থের স্পর্শে আসিয়া পরিচালিত হউক ও বৃদ্ধি লাভ করুক ও পুষ্টি লাভ করুক। তুমি গুরুমহাশয়ের ও উপদেষ্টার কঠোর মুক্তি সংবরণ করিয়া সহচরের মত ও বন্ধুর মত তাহার পাছে পাছে চলিতে থাক। তাহার চিত্ত যেন ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত হইতে না পারে , খাদ্য সামগ্রীর অভাবে যেন তাহার পাকস্থলীর নিষ্কৰ্ম্ম হইবার অবসর না ঘটে, অথচ দুষ্প্রাচ্য ও গুরুভার পদার্থের ভারে যেন পাকস্থলী অবসন্ন হইয়া না পড়ে। সে স্বয়ং দেখিবে, স্বয়ং শুনিবে. স্বয়ং স্পশ করিয়া পরীক্ষা করিবে , এবং পরীক্ষা করিয়া ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে বিবিধ পদার্থের সম্বন্ধ নিরূপণ করিতে থাকিবে । বহুত্বের মধ্যে একত্ব দেখিবে; সাদৃশ্বের মধ্যে পার্থক্য দেখিবে, পাঁচ বার বা প্রতারিত হইবে এবং প্রতারিত হইয়া ভবিষ্যতে সাবধান হইবে, পুনঃ পুনঃ তাহাকে প্রতারিত হইতে দিবে ; যে কখন সংসারের মধ্যে প্রতারিত হয় নাই, তাহার ভাগ্যের আমি প্রশংসা করি ন। সে পুনঃ পুনঃ প্রতারিত হউক, তাহাকে প্রতারিত হইতে দেখিয়া তুমি দয়া করিবে না , কেবল আশার বাক্যে, উৎসাহের বাক্যে ও স্নেহের বাক্যে তাতার মনে আগ্রহের ও প্রীতির ও ঔংস্থক্যের সঞ্চাব কর। সে পুনঃ পুনঃ প্রতাবিত হউক ও অবশেষে সফলতা লাভ করিয়া পরমানন্দে ভাসিতে থাকুক ; তুমি তাহার আনন্দে আনন্দ দেখাও, তাহার উৎসাহে উৎসাহিত হও, তাহার মনে উৎসাহের শক্তি আরও উদ্দীপিত করিয়া দাও। ইহারই নাম বিজ্ঞানশিক্ষা, ইহারই নাম সাহিত্যশিক্ষা, ইহারই নাম ধৰ্ম্মশিক্ষা । শারীরিক ও মানসিক ও নৈতিক, বিবিধ শিক্ষাই এক প্রণালীতে সম্পাদিত হইবে। যাহাতে শরীরে ধল আসিবে, তাহাতেই চিত্তে স্মৃত্তি জন্মিবে, তাহাতেই বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশ লাভ করিবে, তাহাতেই ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তি জাগ্রত হইয়া উঠিবে। ইহারই নাম আবার হাতে কলমে শিক্ষা ; যে ঠেকিয়া না শেখে, তাহার হাতে কলমে শিক্ষা হয় না। আমার বিবেচনায় এই মূল স্থত্রটি অবলম্বন করিয়া কাৰ্য্য করিলে কাৰ্য্যকালে কোন প্রণালী অবলম্বন করিতে হইবে, দেশ-কাল-পাত্রভেদে কিরূপ বিশেষ বিধান ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্লাবগুক হইবে, তাহা আপনা হইতেই আসিয়া পড়িবে, এ স্থলে সে সকল বিশেয বিধির অবতারণায় প্রবৃত্ত হইব না , স্বৰ্ধমান প্রক্সাৰে ৰে বিশেষ কোন নূতন তত্বের উল্লেখ হইল, তাহা নহে ।