পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সামাজিক ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার やが○ প্রবৃত্তি নাই। কলি যুগের এই ভয়াবহ প্রকোপের সময় আবার যে অশ্বমেধ .ও সোমযাগের প্রথা প্রবত্তিত হইবে, এরূপ আমার ভরসা নাই। আবার ষে মন্বত্রিবিষ্ণুহারীতের অমুশাসনমতে আমাদের সমাজযন্ত্ৰ সৰ্ব্বদা চালিত হইবে, এরূপ আমার আশা নাই। বালকের স্কুলে এডমিশনের সময় যে আবার মুণ্ডিতশিব হইয়। অজিন কাষায় ধরিয়া স্কুলগৃহে প্রবেশ করিবে, তাহার আমি ভরসা করি না। নূতন গ্রাজুয়েট যে তাহার গাউন হুড, পরিত্যাগ করিয়া গোলদিঘীতে স্নানের পর সমাবর্তন করিবে, তাহারও আমি আশা করি না । কিন্তু যে প্রাচীন সমাজ মানবসভ্যতার প্রত্যুষকাল হইতে সংসারের জীবনদ্বন্দ্বে সহস্ৰ আঘাত সহস্র নিষ্ঠুর আক্রমণ সহ করিয়াও আজ পর্য্যন্ত জীবিত থাকিতে- সমর্থ হইয়াছে, সেই প্রাচীন সমাজকে আমি নমস্কার করি। যে পুরাতন ধৰ্ম্মমার্গ এই পুরাতন সমাজকে বিঘ্ন বিপত্তি হইতে রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছে, তাহাকে আমি অকপটভাবে ভক্তি করি। যে পুরাতনী বাণী পুরাণ কবি বিশ্ববিধাতার চতুর্মুখ হইতে সমীরিত হইয়া প্রজাপতিপরম্পরায় ও ঋষি পরম্পরায় ও শাস্ত্রকারপরম্পরায় ও অধ্যাপকপরম্পরায় বিবিধ ছন্দে, বিবিধ ঝঙ্কারে ধ্বনিত হইয়া আজ পর্য্যস্ত বিশ্বজগতে প্রতিধ্বনি উৎপাদন করিতেছে, সেই চতুষ্টয়ী বাণীর সম্মুখে আমি ভক্তিসহকারে প্রণত হই । যদি আমাদের সামাজিক ব্যাধির কোন ফলপ্রদ চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়, তাহা এই আত্মসমাজের প্রতি অকপট শ্রদ্ধা ও অবিচলিত ভক্তি। যদি অকৃত্রিম স্বদেশহিতৈষী ও স্বজাতিপ্রিয়তা আমাদের মধ্যে কখনও উৎপন্ন হয়, তাহা হইলেই আমাদের অবস্থার অস্বাভাবিকতা দূর হইবে, আমাদের সামাজিক ব্যাধির প্রতীকার হইবে। যদি আমরা কখনও রঙ্গমঞ্চের অস্বাভাবিক প্রহসনুের অভিনয় ত্যাগ করিয়া প্রকৃত মনুষোচিত কৰ্ম্মক্ষেত্রে বিচরণ করিতে চাই, আমাদের এই প্রাচীন সমাজের প্রতি অকপট শ্রদ্ধা হইতেই সেই ক্ষমতা উৎপন্ন হইবে। র্যাহারা এই পুরাতন সমাজের সহিত সকল সম্পর্ক পরিত্যাগ করিয়া বিদেশ হইতে আনীত বা চৌর্য্যলব্ধ উপকরণ দ্বারা নূতন সমাজ গডিতে চাহেন, তাহারা মূলচ্ছেদনের পর শাখা হইতে ফলপ্রাপ্তির কামনা করেন। যাহাবা এই পুরাতন সমাজকে অদ্য হীনবল ও অধঃপতিত ও শাসনবিষয়ে অসমর্থ দেখিয়া ইহাব প্রতি নিৰ্ম্মম বিদ্রপবাণীর প্রয়োগ করেন, তাহাদের কাপুরুষত্ব অবজ্ঞেয়। কিন্তু বলিতে দুঃথ হয়, আমাদের বর্তমান শিক্ষাপ্রণালী আমাদের সমাজের প্রতি এই অকৃত্রিম শ্রদ্ধার উৎপাদনে সমর্থ হয় নাই। আমরা বিজাতীয় সমাজের সম্বন্ধে যে সংবাদ রাখি, আমাদের আত্মসমাজের সম্বন্ধে সে সংবাদ রাখা আবগুক বোধ করি না। বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীর ফলে কবি জন্মিয়াছেন, ঔপন্যাসিক জন্মিয়াছেন, বাগ্মী জন্সিয়াছেন, রাজনীতিকুশল ব্যক্তি জন্মিয়াছেন, গণিতবিং ও বৈজ্ঞানিক পৰ্য্যস্ত জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন ; কিন্তু ভারতবর্ষের পুরাকালের ও বর্তমান কালের সমাজতন্ত্রের শ্রদ্ধার সহিত আলোচনা করেন, শিক্ষিত সম্প্রদায় মধ্যে এরূপ উদাহরণ নিতান্তই বিরল। ভারতবর্ষের বিবিধধৰ্ম্মী, বিবিধকৰ্ম্মী ত্রিশ' কোটি মন্থন্সের ভাষাতত্ব, আচারতত্ত্ব, ধৰ্ম্মতত্ত্ব প্রভৃতির