8\రి: রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র আমরা হিন্দু সমাজের ওকালতিতে প্রবৃত্ত হইব না। তবে এই বিবাদটার সমালোচনা করিব। বিষয়টা আলোচ্য ; কেন না, কেবল হিন্দু সমাজ কেন, সকল সমাজেই শাস্ত্রের সহিত ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তির এই বিরোধ দেখা যায়। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মূল বেদ । ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম’ শব্দটা ইচ্ছাপূর্বক ব্যবহার করিতেছি। কেন না, আধুনিক হিন্দু ধৰ্ম্মে বেদবিবোধী অনেক উপাদান প্রবেশ করিয়াছে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মূল বেদ। 'ধৰ্ম্ম’ শব্দ ও ‘বেদ’ শব্দের একটু ব্যাখ্যা আবশ্বক। ধৰ্ম্ম বলিলে ঠিক রিলিজন বুঝায় না। রিলিজনের মুখ্য সম্বন্ধ ঈশ্বর, পরকাল ও অতিপ্রাকৃতের সহিত। ধৰ্ম্মের সম্বন্ধ মন্ত্রন্থের সমগ্র জীবনের সহিত । আমরা সম্পূর্ণ ঐহিক স্বার্থের জন্য আহার বিষয়ে ডাক্তারের ব্যবস্থা লই, রাজাকে নির্দিষ্ট খাজনা দিয়া থাকি ; সম্পত্তিতে স্বত্ব লইয়া প্রতিবাদীর সহিত মোকদম করি। এ সকল কার্য্য রিলিজনের অন্তর্গত নহে। কিন্তু ইহ থাটি ধৰ্ম্মের অন্তর্গত । এই সকল কাৰ্য্য যথাবিধানে সম্পাদন না করিলে.অধৰ্ম্ম। ডাক্তার ও উকীল ও ম্যাজিষ্ট্রেট ব্রাহ্মণের শাস্ত্রানুসারে ধৰ্ম্মব্যবস্থাপক। ব্রাহ্মণের ধৰ্ম্মশাস্ত্রের কিয়দংশ ডাক্তারী ও কিয়দংশ আইন। অনেকে এ জন্য বিস্মিত হন, অনেকে গালি দেন। আমরা বিস্ময়েব বা গালি দেওয়ার কারণ দেখি না। ব্যবহার সঙ্গত হইতেছে কি না, সে কথা স্বতন্ত্র । ধৰ্ম্ম শব্দটা রিলিজন অর্থেই ব্যবহার করিতে হইবে, এমন কোন আইন নাই। ব্রাহ্মণের ধৰ্ম্ম মন্তম্ভের সমগ্র কর্তব্যসমষ্টি । বেদ শব্দে সঙ্কীর্ণ অর্থে কয়েকখানি প্রাচীন পুথির সংগ্রহ বুঝায়। প্রশস্ত অর্থে বেদ শব্দ গ্রহণ করা আবশ্বক। ইংরাজি প্রতিশব্দ tradition অনেকট কাছাকাছি আসিতে পারে। আরও প্রশস্ত করিয়া মহন্ত জাতির অথবা আর্য্য জাতির ধৰ্ম্মমার্গে ও কৰ্ম্মমার্গে সমগ্র অতীত কাল ধরিয়া উপাজ্জিত অভিজ্ঞার নাম বেদ । এই বেদ অপৌষেয়, নিত্য, অনাদি । ইহার আদি পাওয়া যায় না। অন্তত: মনুয়া জাতির যে দিন আরম্ভ, এই অভিজ্ঞতার সেই দিন আরম্ভ। কিংবা ইহার আরম্ভ আরও পূৰ্ব্বে । ব্রাহ্মণের শাস্ত্র খুজিলে ডারুইনের প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচনতত্ত্ব মিলিতে পারে, এরূপ আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু প্রাকৃতিক অভিব্যক্তিতে ব্রাহ্মণের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পৃথিবীর অন্য কোন মনুষ্য সম্প্রদায়ের এই বিশ্বাস নাই । ব্রাহ্মণের ইহাই প্রধান গৌরব। ব্রাহ্মণের মতে মনুষ্যের একদিনে সহসা স্বষ্টি হয় নাই। মনুষ্যের অভিজ্ঞতাও একদিনে জন্মে নাই। কোন তারিখে এই অভিজ্ঞতার বীজ বপন হইয়াছিল, তাহার নির্ণয় নাই । হয়ত জগতের যে দিন আদি, এই অভিজ্ঞতারও সেই দিন আরম্ভ। কাজেই বেদ অনাদি ; ঋষিগণ বেদের দ্রষ্ট বা শ্রোত ; স্বয়ং জগন্নিয়ন্ত ব্ৰহ্মাও বেদের স্রষ্টা নহেন। খ্ৰীষ্টানি হিসাবের স্বষ্টি ব্রাহ্মণ মানিতেন না । জগতের স্বষ্টি হয় নাই ; বেদেরও স্বষ্টি হয় নাই। বেদ অপৌরুষেয় । মনুষ্য তাহার প্রাচীন বহু কালের উপাজ্জিত অভিজ্ঞতার ফলে কতকগুলি সামাজিক নিয়মের অধীন হইয়া সমাজ বাধিয়া বাস করে। . এই সকল নিয়মের পরিচালনার ভার কতক রাজার উপর, কতক যাজকের উপর, কতক