পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অথচ কঠিন বেদনার অবস্থাতেও এ-কথা আমি কখনাে অস্বীকার করি নে যে, ইংরেজের স্বভাবে ঔদার্য আছে, বিদেশীয় শাসনকার্যে অন্য য়ুরােপীয়দের ব্যবহার ইংরেজের চেয়েও কৃপণ এবং নিষ্ঠুর। ইংরেজ জাতি-ও-তার শাসননীতি সম্বন্ধে বাক্যে ও আচরণে আমরা যে-বিরুদ্ধতা প্রকাশ করে থাকি তা আর-কোনাে জাতের শাসনকর্তাদের সম্বন্ধে সম্ভবপর হ’ত না; যদি বা হ’ত তবে তার দণ্ডনীতি আরো অনেক দুঃসহ হ’ত, স্বয়ং য়ুরােপে এমন কি আমেরিকাতেও তার প্রমাণের অভাব নেই। প্রকাশ্যভাবে বিদ্রোহঘােষণাকালেও রাজপুরুষদের কাছে পীড়িত হলে আমরা যখন সবিস্ময়ে নালিশ করি তখন প্রমাণ হয় যে ইংরেজ জাতির প্রতি আমাদের নিগূঢ় শ্রদ্ধা মার খেতে খেতেও মরতে চায় না। আমাদের স্বদেশী রাজা বা জমিদারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আরাে অনেক কম।

 ইংলণ্ডে থাকার সময় এটা লক্ষ্য করে দেখেছি,ভারতবর্ষে দণ্ডবিধান-ব্যাপারে গ্লানিজনক ঘটনা ইংরেজ খবরের কাগজে প্রায় কিছুই এসে পৌছত না। তার একমাত্র কারণ এ নয়, পাছে য়ুরােপে বা আমেরিকায় নিন্দা রটে। বস্তুত কড়া ইংরেজ শাসনকর্তা স্বজাতির শুভবুদ্ধিকেই ভয় করে, বেশ করেছি, খুব করেছি, দরকার ছিল জবরদস্তি করবার—এটা বুক ফুলিয়ে বলা ইংরেজদের পক্ষে সহজ নয়, তার কারণ ইংরেজের মধ্যে বড়ো মন আছে। ভারতবর্ষ সম্বন্ধে আসল কথাগুলাে ইংরেজ খুব কম জানে। নিজেদের উপর ধিক্কার দেবার কারণ চাপা থাকে। এ-কথাও সত্য, ভারতের নিমক দীর্ঘকাল যে খেয়েছে তার ইংরেজি যকৃৎ এবং হৃদয় কলুষিত হয়ে গেছে অথচ আমাদের ভাগ্যক্রমে তারাই হল অথরিটি।

 ভারতবর্ষে বর্তমান বিপ্লব উপলক্ষ্যে দণ্ডচালনা সম্বন্ধে কর্তৃপক্ষ বলেছেন তার পীড়ন ছিল ন্যূনতম মাত্রায়। এ-কথা মেনে নিতে আমরা

৯১