পাতা:রাষ্ট্র ও বিপ্লব — ভি. আই. লেনিন.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১২
রাষ্ট্র ও বিপ্লব

বলবত্তর হইতে থাকে। বর্তমান কালের ইউরোপের দিকে তাকালেই যথেষ্ট; এখানে শ্রেণী-বিরোধ ও রাজ্যজয়ের প্রতিদ্বন্দিতা এই সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্রকে এমন একটা চরম অবস্থায় আনিয়া দাঁড় করাইয়াছে যে, ইহা সমগ্র সমাজকে, এমন কি, খোদ রাষ্ট্রকেই গ্রাস করিতে উদ্যত হইয়াছে।” [১]

 বিগত শতকের শেষ দশকের প্রথম দিকে এঙ্গেল্‌স ইহা লিখিয়াছিলেন। তাহার সর্বশেষ ভূমিকার তারিখ ১৮৯১ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই ভুন। সাম্রাজ্যতন্ত্র বলিতে বুঝায় ব্যবসায়-সঙ্ঘের [‘ট্রাস্টে’র] পূর্ণ আধিপত্য, বড়ো-বড়ো ব্যাঙ্কের সর্বশক্তিমত্তা, ব্যাপক আকারে ঔপনিবেশিক নীতি, ইত্যাদি, সাম্রাজ্যতন্ত্রমুখী এই গতিবেগ ফ্রান্সে তখন সবে শুরু হইয়াছে, উত্তর-আমেরিকা ও জর্মানিতে তখন ইহা আরও দুর্বল। সেই সময় হইতে ‘রাজ্যজয়ের প্রতিদ্বন্দী’র বিরাট আকারে বাড়িয়া গিয়াছে—বিশেষ-ভাবে বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে প্রথম দিকে, যখন এই-সব “রাজ্যজয়ে প্রতিদ্বন্দী”র অর্থাৎ বড়ো-বড়ো পররাজ্যগ্রাসী শক্তির মধ্যে সারা দুনিয়া ভাগাভাগি হইয়া গিয়াছে। তারপর হইতে যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও নৌবহর অসম্ভব হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে; সমগ্র পৃথিবীর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য, লুটের-মাল ভাগাভাগির জন্য ১৯১৪-১৯১৭ সালে ইংলন্ড ও জর্মানির মধ্যে পররাজ্যগ্রাসী যুদ্ধের ফলে লোভপরায়ণ রাষ্ট্রক্ষমতা সমাজের সমস্ত শক্তিকে ‘গ্রাস করিতে-করিতে’ একটা পূর্ণ বিপর্ষয়-ই আসন্ন করিয়া তুলিয়াছে।

 ১৮৯১ সালেই এঙ্গেল্‌স ‘রাজ্যজয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা’কে বড়ো-বড়ো শক্তির বৈদেশিক নীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলিয়া নির্দেশ করিতে পারিয়াছিলেন। ১৯১৪-১৭ সালে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহুগুণ তীব্রতর হইয়া একটা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে সম্ভব করিয়া তুলিয়াছে। সমাজতন্ত্রের ছন্মবেশধারী নীচ জঙ্গী জাতীয়তাবাদীরা এমন সময়েও ‘পিতৃভূমি রক্ষা’, “প্রজাতন্ত্র ও বিপ্লবকে রক্ষা’ ইত্যাদি বুলি কপ্‌চাইয়া ‘তাহাদের নিজেদের’ বুর্জোয়া শ্রেণীর পরবাজ্যগ্রাসী নীতি সমর্থন করে।[২]

৩। রাষ্ট্র নিপীড়িত শ্রেণীকে শোষণ করিবার যন্ত্র

 সমাজের উর্দ্ধে অবস্থিত একটি বিশেষ সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর ধার্য করা ও রাষ্ট্রের তরফে ঋণ সংগ্রহ করা আবশ্যক।

  1. * ঐ।—অ।
  2. † লেনিন এখানে কাউট্‌স্কি, শাইদেমান, ভান্দেরভেল্‌দে, পোত্রেসভ, ৎসেরেতেলি প্রমুখ ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে’র নেতৃবৃন্দের কার্যকলাপের উল্লেখ করিতেছেন।— অ।