পাতা:লালন শাহ ও লালন গীতিকা.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ব ) মনে হয়, ফারসী সুফী সাহিত্যের সাকী’ লালনের গানে ‘মনের মানুষ’ হ’য়েছেন । বাংলা সাহিত্যে মনের মানুষ’ তত্ত্ব লালন শাহের একটি মহৎ দান । এই মনের মানুষই রবীন্দ্র কাব্যে "জীবন-দেবতা’ হ’য়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন ৷ সাকীর কারবার স্বরা ( অধ্যাত্ম-প্রেম ) ও ‘সুর’ ( অধ্যাত্ম-প্রেমসঙ্গীত ) নিয়ে । সাকী প্রেমরূপ সুরা যোগান, সুফী সেই স্বরা পানে উন্মত্ত (হাল অবস্থায় ) হয়ে সাকীর (মাশুক=আল্লাহ্ ) মহিমা গানে মশগুল হয় । সুফী-সাধনার মর্মকথা সংক্ষেপে হ'ল এই । লালন শাহী গানেও মনের মানুষের অপার মহিমার কথা শুনি। হৃদয়ের জায়নামাজে উন্মত্ত আশিক মনের মানুষের ধ্যানে নিমগ্ন হন । কবি বলেন— “পড় রে দায়েমী নামাজ এ দিন হ’ল আখেরী । মাশুক রূপ হৃদকমলে দেখ আশেক বাতি জেলে কিবা সকাল কি বৈকালে দায়েমীর নাম অবধারি ॥” এই মাশুক’ই মুফীর সাকী’, লালনের—মনের মানুষ’, ‘অচিন পাখী', “অ ধর কালা’, ‘ল। শরীকালা (ছ)’, এবং 'আলেক সাই’ । রবীন্দ্ৰকাব্যে ‘অন্তর্যামী’, ‘জীবন-দেবতা', ‘বিশ্বদেবতা মূলতঃ এই মনের মানুষেরই নামান্তর । তাই শুধু তারই উদ্দেশে বলা যায়—

  • "ওহে অন্তরতম,

মিটেছে কি তব সকল তিয়াস আসি অস্তরে মম, দুঃখ মুখের লক্ষ ধারায় পাত্র ভরিয়া দিয়াছি তোমায়, নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ দলিত দ্রাক্ষা সম ।” ইত্যাদি —রবীন্দ্রনাথ ।