পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত নিশ্বাস ফলিয়া বলিলাম, এ, আর সেই কমললতা! মিনিট-দুই পরে ফিরিয়া আসিয়া পাতের কাছে দুধের বাটি রাখিয়া পাখা-হাতে সে বাতাস করিতে বসিল, বলিল, এতকাল মনে হ’ত, এ নয়—কোথায় যেন আমার পাপ আছে। তাই, গঙ্গামাটিতে মন বসল না, ফিরে এলুম কাশীধামে। গুরুদেবকে ডাকিয়ে এনে চুল কেটে গয়না খুলে একেবারে তপস্যা জুড়ে দিলুম। ভাবলুম, আর ভাবনা নেই, স্বর্গের সোনার সিড়ি তৈরী হ’লো বলে । এক আপদ তুমি সে ত বিদায় হ’লে । কিন্তু সেদিন থেকে চোখের জল ষে কিছুতে থামে না । ইষ্টমন্ত্র গেলুম ভুলে ঠাকুরদেবতা করলে অন্তৰ্দ্ধান, বুক উঠল শুকিয়ে, ভয় হ’লে৷ এই যদি ধৰ্ম্মের সাধনা তবে এসব হচ্চে কি ! শেষে পাগল হবে। নাকি ? আমি মুখ তুলিয়া তাহার মুখের প্রতি চাহিলাম, বলিলাম, তপস্যার গোড়াতে দেবতার। সব ভয় দেখান ! টিকে থাকলে তবে সিদ্ধিলাভ হয় । রাজলক্ষ্মী কহিল, সিদ্ধিতে আমার কাজ নেই, সে আমি পেয়েচি । কোথায় পেলে ? এখানে । এই বাড়িতে । অবিশ্বাস্ত । প্রমাণ দাও । প্রমাণ দিতে যাব তোমার কাছে ! আমার বয়ে গেছে । কিন্তু ক্রীতদাসীর। এরূপ উক্তি কদাচ করে না । দ্যাধো, রাগিও ন৷ বলচি ৷ একশোবার ক্রীতদাসী-ক্রীতদাসী করে ত ভালো হবে না । আচ্ছা, খালাস দিলাম। এখন থেকে তুমি স্বাধীন । রাজলক্ষ্মী পুনরায় হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, স্বাধীন ষে কত, এবার তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েচি। কাল কথা কইতে কইতে তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, আমার গলার ওপর থেকে তোমার হাতখানি সরিয়ে রেখে আমি উঠে বসলুম। হাত দিয়ে দেখি ঘামে তোমার কপাল ভিজে—অrচলে মুছিয়ে দিয়ে একখানা পাখা নিয়ে বসলুম, মিটমিটে আলোটা দিলুম উজ্জল করে, তোমার ঘুমন্ত মুখের পানে চেয়ে চোখ আর ফিরুতে পারলুম না। এ যে এত মুন্দর এর আগে কেন চোখে পড়েনি ? এতদিন কানা হয়ে ছিলুম কি ? ভাবলুম, এ যদি পাপ তবে পুণ্যে আমার কাজ নেই, এ যদি অধৰ্ম্ম তবে থাক গে আমার ধৰ্ম্মচর্চা-জীবনে এই যদি হয় মিথ্যে তবে জ্ঞান না হতেই বরণ করেছিলুম একে কার কথায় ও কি, ধাচ্চো না যে ? সব ছখই পড়ে ब्रहेज cष । আর পারিনে । তবে কিছু ফল নিয়ে আসি ।