পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত হয়ত গা একটু তপ্ত হয়েচে–কাল সকালে থাকবে না। লালুর মা আসিয়া কহিল, মা, রান্নাঘরে বামুনঠাকুর তোমাকে ডাকচে । যাই, বলিয়া সে কমললতার প্রতি একটা সৰ্ব্বতজ্ঞ দৃষ্টিপাত করিয়া চলিয়া গেল । আমার রোগের সম্বন্ধে কমললতার কথাই ফলিল। জরটা ঠিক সকালেই গেল না বটে, কিন্তু দু-একদিনেই সুস্থ হইয়া উঠিলাম। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের ভিতরের কথাটা কমললতা টের পাইল এবং আরও একজন বোধ হয় পাইলেন তিনি বড়গোসাইজী নিজে । যাবার দিন আমাদের আড়ালে ডাকিয়া কমললতা জিজ্ঞাসা করিল, গোসাই, তোমাদের বিয়ের বছরটি মনে আছে ভাই ? নিকটেই দেখি একটা থালায় ঠাকুরের প্রসাদী চন্দন ও ফুলের মালা । প্রশ্নের জবাব দিল রাজলক্ষ্মী, বলিল, উনি ছাই জানেন—জানি আমি । কমললত হাসিমুখে কহিল, এ কি রকম কথা যে একজনের মনে রইল, আর একজনের রইল না ? রাজলক্ষ্মী বলিল, খুব ছোট বয়সে কিনা—তাই ! ওঁর তখনো ভালো জ্ঞান হয়নি। কিন্তু উনিই যে বয়সে বড় রে রাজু। ই: ভারী বড়ো ! মোটে পাঁচ-ছয় বছরের। আমার বয়স তখন আট-ন বছর, একদিন গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে মনে মনে বললুম, আজ থেকে তুমি হলে আমার বর! বর ! বর ! এই বলিয়া আমাকে ইঙ্গিতে দেখাইয়া কহিল, কিন্তু ও-রাক্ষস তক্ষুনি আমার মালা সেইখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খেয়ে ফেললে । কমললতা আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ফুলের মালা খেয়ে ফেললে কি করে ? আমি বলিলাম, ফুলের মালা নয়, পাকা বঁইচিফলের মালা। সে যাকে দেবে সেই খেয়ে ফেলবে । কমললত হাসিতে লাগিল, রাজলক্ষ্মী বলিল, কিন্তু সেই থেকে শুরু হ’লো—আমার দুৰ্গতি। ওঁকে ফেললুম হারিয়ে, তার পরের কথা জানতে চেয়ে না দিদি-কিন্তু লোকে যা ভাবে তাও না—তারা কত কিই না ভাবে । তারপরে অনেকদিন কেঁদে কেঁদে হাতড়ে বেড়ালাম খুজে খুজে—তখন ঠাকুরের দয়া হ’লো—যেমন নিজে দিয়েও হঠাৎ একদিন কেড়ে নিয়েছিলেন, তেমনি অকস্মাৎ আর একদিন হাতে হাতে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন । এই বলিয়া সে উদ্দেশে তাহাকে প্রণাম করিল। কমললত বলিল, সেই ঠাকুরের মালা-চন্দন বড়গোসাই দিয়েচেন পাঠিয়ে, আজ ফিরে যাবার দিনে তোমরা দু’জনকে দু’জনে পরিয়ে দাও । X 3"