পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ গোলোক ছকটি রাখিয়া দিয়া একটু হাস্ত করিয়া বলিলেন, তোর মাসীর জালায় আমি পারিনে সন্ধু। পৰ্ব্বদিনটায় যে একবেলা উপবাস করব সে বুঝি তার সইল না ! এই বলিয়া তিনি উঠিয়া দাড়াইলেন এবং যাইতে যাইতে নিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া গেলেন, সংসারে থেকে পরকালের দুটো কাজ করার কতই না বিঘ্ন ; মধুসুদন ! হরি! 8 সন্ধ্যার শরীরটা কিছুদিন হইতে তেমন ভাল চলিতেছিল না। প্রায়ই জর হইত এবং পিতার চিকিৎসাধীনে থাকিয়া সে যেন ধীরে ধীরে মন্দের দিকেই পথ করিতেছিল। মা বিপিন ডাক্তারকে ডাকিয়া পাঠাইবেন বলিয়া প্রত্যহ ভয় দেখাইতেছিলেন এবং ইহা লইয়া মাতায় কন্যায় একটু-ন-একটু কলহ প্রায় প্রতিদিনই ঘটতেছিল। আজ সায়াহ্নবেলায় সন্ধ্য সম্মুখের বারান্দায় একটি খুটি ঠেস দিয়া বসিয়া মাতৃ-প্রদত্ত সাগুর বাটিটা চোখ বুজিয়া নি:শেষ করিল এবং তাড়াতাড়ি একটি পান মুখে পুরিয়া দিয়া কোনমতে সেগুলোর উৰ্দ্ধগতি নিবারণ করিল। এই খাদ্যবস্তুটার প্রতি তাহার অতিশয় বিতৃষ্ণা ছিল, কিন্তু তথাপি না খাওয়া এবং কম খাওয়া লইয়া আর তাহার কথা সৃষ্টি করিতে ইচ্ছা হইল না । কোথাও-না-কোথাও হইতে মা যে তাহার প্রতি দৃষ্টি রাথিয়াছেন, ইহা সে নিশ্চয় জানিত । ইতিপূৰ্ব্বে বোধ হয় সে একখানা বই পড়িতেছিল—তাহার খোলা পাতাটা উপুড় করিয়৷ তাহার কোলের উপর রাখা ছিল, সেইখানা পুনরায় হাতে তুলিয়া লইয়া দৃষ্টি নিবন্ধ করিবার উদ্যোগ করিতেই শুনিতে পাইল প্রাঙ্গণের একপ্রাস্ত হইতে ডাক আসিল, খুড়ীমা, কই গো ? যে বাড়ি ঢুকিয়াছিল সে অরুণ । তাহার জাম-কাপড় এবং পরিশ্রান্ত চেহারা দেখিলেই বুঝা যায় সে এইমাত্র অন্যত্র হইতে আসিতেছে । মুহূর্তের জন্য সন্ধ্যায় পাণ্ডুর মলিন মুখের উপর একটা রক্তিমাভা দেখা দিয়া গেল। সে চোখ তুলিয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিল, তুমি বুঝি কোলকাতা থেকে আসচ অরুণদা ? অরুণ কাছে আসিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, ই, কিন্তু তোমাকে এমন শুকনো দেখাচ্চে কেন ? আবার জর নাকি ? সন্ধা বলিল, ঐ-রকম কিছু একটা হবে বোধ হয় ; কিন্তু তোমার চেহারাও তে। খুব তাজ দেখাচ্ছে না। অরুণ হাসিয়া কহিল, চেহারার আর অপরাধ কি ? সারাদিন নাওয়া-খাওয়া שר ל