পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মৃত্যুঞ্জয় মাথা নাড়িয়া কহিল, তাতে আর সন্দেহ কি ! গোলোক কহিলেন বুঝি সমস্তই মৃত্যুঞ্জয় । কুলীনের কুল রাখা কুলীনেরই কাজ । না রাখলে প্রত্যবায় হয় । কিন্তু একে শোক-তাপের শরীর, বয়স ধর পঞ্চাশের কাছে ঘেষেই আসচে কিন্তু কি যে স্বভাব, অপরের বিপদ শুনলেই প্রাণটা যেন কেঁজে ওঠে—না বলতে পারিনে । মৃত্যুজয় পুনঃ পুন: শিল্প সঞ্চালন করিতে লাগিল। গোলোক পুনশ্চ একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিতে লাগিলেন, এই স্বভাব-কুলীনের গ্রামে সমাজের মাথা হওয়া যে কি ঝকৃমারি তা আমি জানি । কে খেতে পাচ্চে না, কে পরতে পাচ্চে না, কার চিকিৎসা হচ্চে না—এ সকল ত আছেই, তার ওপর এই সব জুলুম হলে ত আমি আর বঁাচিনে মৃত্যুঞ্জয় । প্রাণকৃষ্ণ গরীব-ত মেয়েটি বেশ ভাগর হয়ে উঠেচে ? তের-চোদ নয়, পনের-ষোলয় কম হবে না কিছুতেই—ত ব’লো না হয় প্রাণকৃষ্ণকে একবার দেখা করতে— মৃত্যুঞ্জয় ব্যগ্র হইয়া বলিল, আজই—গিয়েই পাঠিয়ে দেব–বরঞ্চ সঙ্গে করেই না হয় নিয়ে আসব। গোলোক উদাস-কণ্ঠে কহিলেন, এনে, কিন্তু বড় বিপদে ফেললে মৃত্যুঞ্জয়— গরীব ব্রাহ্মণের এ বিপদে না বলবই বা কি করে। মধুসূদন ! ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন ! যা করাবেন তাই করতে হবে । আমরা নিমিত্ত বই ত নয় ! মৃত্যুঞ্জয় নীরব হইয়া রহিল। গোলোকের হঠাৎ যেন একটা কথা মনে পড়িয়া গেল। বলিলেন, ই দ্যাখো, তোমাকে যেজন্তে ডেকে পাঠিয়েচি তাই এখনো বলা হয়নি । বলচি মাসটা বড় টানাটানি চলচে ; তোমার স্বদের টাকাটা— মৃত্যুঞ্জয় করুণম্বরে বলিল, এ মাসটা যদি একটু দয়া করে— গোলোক কহিলেন, আচ্ছা আচ্ছ, তাই হবে । আমি কষ্ট দিয়ে এক পয়লাও নিতে চাইনে ; কিন্তু বাবাজী, তোমাকেও আমার একটি কাজ করে দিতে হবে । মৃত্যুঞ্জয় প্রফুল্প হইয়া কহিল, যে আজ্ঞে। আজ্ঞা করুন ? গোলোক বলিলেন, সনাতন হিন্দুধৰ্ম্মটি বাচিয়ে সমাজ রক্ষা করে চলা ত সোজা দায়িত্ব নয় মৃত্যুঞ্জয় । এ মহৎ ভার যার মাথার উপর থাকে তার সকল দিকে চোখকান খুলে রাখতে হয়। প্রিয় মুখুয্যের মায়ের সম্বন্ধে কি একটা নাকি গোল ছিল! এই খবরটি বাবা তোমাকে তাদের গ্রামে গিয়ে অতি গোপনে সংগ্ৰহ করে জানতে হবে। সে ছিলেন বটে তোমার পিতামহ শিরোমণি মহাশয়, বিশত্রিশখানা গ্রামের নাড়ীর খবর ছিল তার কণ্ঠস্থ-ভূপতি চাটুয্যের ষে দশটি বচ্চর

  • at