শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কিছুতেই ছেড়ে দেবেন না, যেমন করে হোক খাওয়াবেনই। আর সে কি যত্ন । নলিনী। তবে ? এসব কি আসে সম্পদের দম্ভ থেকে ? নরেন। আর কি অদ্ভুত অপরিসীম পিতৃভক্তি এই মেয়েটির । এই বাড়িটা নিয়ে পৰ্য্যন্ত র্তার মনে শাস্তি ছিল না, নিতে হয়েছিল কেবল বিলাসবাবুর জবরদস্তিতে— নলিনী । এ-কথা আমরা সবই জানি ডক্টর মুখার্জি । নরেন । হ্যা, অনেকেই জানে। সেদিন ওঁকে একটু বিপদগ্রস্ত করার উদ্দেশ্বেই বনমালীবাবুর সেই চিঠির উল্লেখ করে বলেছিলুম, আমার বাবা যত ঋণই করে থাকুন আপনার বাবা কিন্তু এ-বাড়ী আমাকেই যৌতুক দিয়েছিলেন। তবু আপনি কেড়ে নিলেন। শুনে বিজয়ার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, বললেন, সত্যি হলে এ বাড়ি আপনাকে আমি ফিরিয়ে দেব। বললুম, সত্যি বটে, কিন্তু ফিরিয়ে নিয়ে আমি করব কি ? পেটের দায়ে চাকরি করতে নিজে থাকব বাইরে,—বাড়ি হবে বনজঙ্গল, শিয়াল-কুকুরের বাসা—তার চেয়ে যা হয়েছে সেই ভালো । তিনি মাথা নেড়ে বললেন, না, সে হবে না,—নিতেই হবে আপনাকে । বাবার আদেশ আমি প্রাণ গেলেও উপেক্ষা করতে পারব না । অন্তত: বাড়ির ন্যায্য যা দাম—তাই নিন । বললুম, ভিক্ষে নিতে আমি পারব না। তিনি বললেন, তা হলে বিলিয়ে দেব আপনার দূরসম্পৰ্কীয় আত্মীয়দের। বাবা যা দিয়ে গেছেন আমি তা অপহরণ করব না—কোনমতেই না—এই আমার পণ । শুনে, দুষ্টবুদ্ধি মাথায় চেপে গেল, বললুম, ও পণ রাখতে গেলে কি কি দিতে হয় জানেন ? শুধু ওই বাড়িটাই নয়, এই বাড়ি, এই জমিদারী, দাস-দাসী, আমলা-কৰ্ম্মচারী, খাট-পালঙ্ক-টেবিল-চেয়ার, মায় তাদের মনিবটিকে পর্য্যন্ত আমার হাতে তুলে দিতে হবে । দেবেন এইসব ? পারবেন দিতে ? নলিনী । ( সবিস্ময়ে ) বনমালীবাবুর আছে নাকি এইসব চিঠি ? কই আমাদের তো কাউকে বলেননি । নরেন । ( হাসিয়া ) এ তামাসা বলব কাকে ? আমি কি পাগল ? কিন্তু চিঠির কথা বলেন তো সত্যিই আছে বনমালীবাবুর চিঠি । সত্যি আছে এইসব লেখা। (আঙুল দিয়া দেখাইয়া) ঐ ঘরটায় ছিল এক তাড়া চিঠি একটা ভাঙা দেরাজের মধ্যে—বাবার চিঠি বলে দয়ালবাবু দিলেন আমার হাতে, পড়ে দেখি তাতে এই মজার ব্যাপার। জানেন তো, আমার বাবার বনমালীবাবু ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু। লেখাপড়ার জন্য আমাকে বিলেতে পাঠিয়েছিলেন তিনিই। নলিনী । তারপরে ? নরেন। বিজয়া বললেন, কই দেখি বাবার চিঠি। পকেটেই ছিল, ফেলে দিলুম স্বমুখে । বাণ্ডিল খুলে ফেলে খুজতে লাগল বুভুকু কাণ্ডালের মত—হঠাৎ চেচিয়ে . more
